• বিয়োগের পরে যোগ, নতুন নামে নজর শাসক-বিরোধীর
    আনন্দবাজার | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বিয়োগের অঙ্ক চলছেই। এ বার যোগে নজর!

    ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ায় শুনানি-পর্ব শেষ হলে ঝাড়াই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হবে। সেই তালিকায় উঠবে নতুন ভোটারদেরও নামও। এসআইআর-এ নাম বাদ যাওয়া ঘিরে তুলকালাম বিতর্কের মাঝেই এই নতুন নাম অন্তর্ভুক্তির দিকে নজর দিচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং প্রধান বিরোধী বিজেপি। খসড়া তালিকায় বাদ যাওয়া বেশ কিছু ভোটার যেমন ফের আবেদন করে ও নথিপত্র দেখিয়ে তালিকায় ফিরে আসবেন, তেমনই প্রথম বার ভোটাধিকার পাওয়া প্রজন্মের প্রতিনিধিদের নামও চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে। নবীন ভোটারদের নজর কাড়তে পদ্ধতিগত বিষয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক কৌশলে জোর দিচ্ছে দুই যুযুধান শিবিরই। তৎপর হচ্ছে সিপিএমও।

    নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে গণনা-পত্র জমা দেওয়ার পর্ব শেষে এসআইআর-এর খসড়া তালিকায় যত ভোটার বাদ গিয়েছেন, তার মধ্যে ৩২ লক্ষ ৬৫ হাজার নাম আছে স্থানান্তরিত ও অনুপস্থিত তালিকায়। তৃণমূলের হিসেব, এর মধ্যে বড় অংশ মহিলা, যাঁরা বিবাহ সূত্রে স্থানান্তরিত হয়েছেন। কিছু মানুষ আছেন কর্মসূত্রে অন্যত্রবাসী। শাসক শিবির সূত্রের খবর, আবেদন করে ও নথি পেশে সহযোগিতা করে অন্তত ১৫ লক্ষ নাম (যার অধিকাংশই মহিলা) তালিকায় ফেরত আনা তাদের লক্ষ্য। তৃণমূলের বিশ্লেষণে, মহিলা-মন জয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই অনেক এগিয়ে। তাই যত মহিলা, তত তৃণমূলের লাভ! তৃণমূল নেত্রী মমতাও দলীয় মঞ্চে বারবার বলছেন, ‘‘বিয়ের পরে মেয়েদের পদবি বদলেছে। ঠিকানা বদলেছে। তার জন্য নাম কেটে দিচ্ছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না!’’

    বিহারে এসআইআর-এর পরে চূড়ান্ত তালিকায় যোগ হয়েছিল নতুন প্রজন্মের, ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী ১৪ লক্ষ ১ হাজার ১৫০ জন ভোটার। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও সংখ্যা তার কিছু বেশি-কম হতে পারে বলে রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা। এসআইআর-এর আবহে এই সংখ্যক ভোটার গুরুত্বপূর্ণ পুঁজি বলে ধরেই তাঁদের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছে শাসক ও বিরোধীরা। শাসক শিবিরে সাংগঠনিক নির্দেশ জারি হয়েছে, ফর্ম ৬ পূরণ করে নতুন ভোটারদের নাম তোলায় সহায়তা করতে হবে। পাশাপাশি, ভোটের আগে প্রচারেও এই অংশের প্রতি দৃষ্টি থাকবে। এসআইআর-এ সাংগঠনিক পর্যবেক্ষকের দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব বা স্মার্টফোন দেওয়া, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড-সহ নানা প্রকল্প চালাচ্ছে। এই ছেলেমেয়েরাই পর্যায়ক্রমে নতুন ভোটার হচ্ছে। এই সূত্র ধরেই আমাদের সরকারের প্রভাব ও কাজের কথা নতুন প্রজন্মকে বলতে হবে।’’

    রাজ্য মমতার সরকার চলছে ১৫ বছর। বাম জমানার ৩৪ বছরের কাসুন্দি বা অতীতের নানা কাহিনি নতুন ভোটারদের কাছে খুব কার্যকরী রসদ নয়। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা তাই বলছেন, ‘‘নতুন ছেলেমেয়েরা তৃণমূলে এই দুর্নীতি, অপশাসন দেখতে দেখতেই বড় হয়েছে। তাদের বড় অংশ তৃণমূলের সমর্থক হবে না, এটাই স্বাভাবিক। নবীন ও তরুণ প্রজন্মের কথা ভেবেই ‘ঘরের ছেলে ঘরের ভাত চায়’-এর ডাক সামনে রেখে এবং রাজ্যের ভবিষ্যতের কথা বলে আমরা ভোটে নামব।’’ বিহারের বিধানসভা ভোটেও ভিন্ রাজ্যে কাজের জন্য যাওয়ার প্রশ্ন বড় করেই চর্চায় ছিল এবং শেষমেশ জয় পেয়েছে বিজেপিই। আর এরই সঙ্গে সঙ্গে ফর্ম ৬-এর ক্ষেত্রে নজর দিতে বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব বার্তা পাঠিয়েছেন বুথ লেভল এজেন্টদের (বিএলএ-২)।

    তৃণমূল বা বিজেপির মতো তহবিলের জোর এবং সরকারি মদত না-থাকলেও সংগঠনে তরুণ প্রজন্মের এক গুচ্ছ মুখ তুলে আনতে পেরেছে সিপিএম। সদ্য ‘বাংলা বাঁচাও যাত্রা’য় সামনে রাখা হয়েছে সেই মুখেদেরই। তরুণদের দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রুটি-রুজির কথা বলে নবীনদের কাছে পৌঁছতে চাইছে সিপিএমও। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘নতুন নাম তালিকায় তুলতে সাংগঠনিক ভাবে যা সাহায্য করার, আমরা করব। আর রাজনৈতিক ভাবে, ধর্মীয় মেরুকরণের বাইরে মানুষের জন্য জরুরি কথা এখনকার মতো করেই বর্তমান প্রজন্মের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)