২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় তখন। হুগলির বাড়ি বাড়়ি জনসংযোগ করছেন অভিনেত্রী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। তখন আর এক অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে হুগলিতে সভা করেছিলেন অভিনেতা-বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তী। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে তৃণমূল তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করেছিলেন তিনি। তবে লকেটের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে কোনও কটাক্ষ করেননি। এত দিন বাদে আবার হুগলিতেই পৃথক রাজনৈতিক কর্মসূচি করলেন মিঠুন এবং রচনা। একে অপরের দলকে বিঁধলেন তাঁরা। তবে দু’জনেই দু’জনকে প্রশংসায় ভরালেন।
মঙ্গলবার হুগলিতে নিজস্ব লোকসভা এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ রচনা। আবার চন্দননগরেই বিজেপির রাষ্ট্রীয় কার্যকারিনী কমিটির সদস্য মিঠুনের সভা ছিল। ‘মিঠুনদা’ তাঁর লোকসভা কেন্দ্রে এসেছেন শুনে রচনার মন্তব্য, ‘‘ওঁর প্রতি আমার আলাদা রকমের সম্মান এবং ভালবাসা সবসময় আছে। থাকবেও। মিঠুনদাকে আমি রাজনীতিবিদ হিসাবে দেখিই না।’’ রচনা আরও বলেন, ‘‘উনি আমার নায়কও। একসঙ্গে কতগুলো ছবি করেছি! শুধু আমিই নই, মহানায়কের পরে যদি কেউ থাকেন তো তিনি মিঠুন চক্রবর্তী। বাঙালি হয়ে ভারতবর্ষের বুকে রাজ করেছেন উনি।’’
রচনা জানান, রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং আদর্শ ভিন্ন হতেই পারে। তাতে ব্যক্তিমানুষের প্রতি অশ্রদ্ধার প্রশ্নই নেই। মিঠুনের ক্ষেত্রে সে-ই প্রশ্নই নেই। বিজেপি নেতাকে নিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘‘উনি একজন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা। সেই জায়গাটা আমার কাছে সব থেকে বড়।’’
চন্দননগরে রচনা-প্রসঙ্গ উঠতেই একই বক্তব্য মিঠুনের। তিনি জানান, তৃণমূল সাংসদের প্রতি তাঁর একই রকম সম্মান এবং ভালবাসা রয়েছে। তবে সেটা ব্যক্তি এবং শিল্পী রচনার জন্য। মিঠুনের কথায়, ‘‘উনি আমাকে যতটা ইজ্জত দেন, আমিও ততটাই ইজ্জত করি। আমাদের এমনি মতভেদ থাকতেই পারে। বাট আই স্যালুট হার। আই রেসপেক্ট হার।’’
সভা থেকে তৃণমূলকে নানা ইস্যুতে আক্রমণ করেছেন মিঠুন। তিনি বলেন, ‘‘এই সরকার এখানে ওয়েস্ট বাংলাদেশ বানাতে চাইছে। আমি পশ্চিমবাংলায় আছি না বাংলাদেশে?’’ পূর্ব মেদিনীপুরে স্কুলের অনুষ্ঠানে গায়িকা লগ্নজিতা চক্রবর্তীর হেনস্থা নিয়েও রাজ্য প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন বিজেপি নেতা। তাঁর কথায়, ‘‘মায়ের গান করার জন্য একটা বাচ্চা মেয়েকে আটকে দিচ্ছে! আমরা ভারতীয় মুসলিমদের বিপক্ষে নই। আমরা সেই মুসলিমদের বিপক্ষে, যারা ভারতের ক্ষতি করতে চায়।’’
অন্য দিকে, রচনা বলাগড় এবং বাঁশবেড়িয়ায় কর্মসূচিতে যোগ দিলেও চুঁচুড়ায় দলীয় বিধায়ক অসিত মজুমদারের পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত ‘এমএলএ কাপ’-এ যাননি। যা থেকে মনে করা হচ্ছে রচনা-অসিত দূরত্ব এখনও অটুট।