পার্ক স্ট্রিটে আলোকসজ্জার সঙ্গে তাল মেলাচ্ছে ঝিকমিক আলোর চশমা, মাথার ব্যান্ড, আর সান্টা টুপি! মধ্যরাতের প্রার্থনায় মমতাও
আনন্দবাজার | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
লাল রঙের পোশাক। মাথায় সান্টা টুপি। ঝিকমিক আলোর চশমা। মাথার ব্যান্ডেও ঝিকমিক আলোর খেলা। বড়দিনের আগের রাতে পার্ক স্ট্রিটে যে দিকে নজর যাচ্ছে, সে দিকেই ধরা পড়ছে এই ছবি। সেজেগুজে বাহারি পোশাকে থিকথিক করছে ভিড়। উৎসবের মেজাজ। বড়দিনের উৎসবে সামিল হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। ক্যাথিড্রাল অফ দ্য মোস্ট হলি রোজারিতে প্রার্থনায় যোগ দিয়েছেন তিনি।
বুধবার রাত ৯টার কিছু আগে কলকাতার বড়বাজারে ক্যাথিড্রাল অফ দ্য মোস্ট হলি রোজারিতে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে বড়দিনের আগের রাতে বিশেষ প্রার্থনাসভায় যোগ দেন তিনি। প্রতিবছরই বড়দিনের আগের রাতে এখানে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারও তার অন্যথা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাও। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনও ছিলেন সেখানে।
পরে মুখ্যমন্ত্রী নিজের সমাজমাধ্যম হ্যান্ডলে ওই প্রার্থনাসভার বেশ কিছু ছবিও পোস্ট করেন। ওই পোস্টের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘বড়দিন একতা, শান্তি এবং সহানুভূর্তির বার্তা নিয়ে আসে। যা সকল ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে।’ উৎসবের মরসুম এবং সকলকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে মমতা আরও লেখেন, ‘দয়া, ক্ষমা এবং সহানুভূতির বার্তা আমাদের সকলের সঙ্গে থাকুক এবং আমাদের নতুন বছরে পথ দেখাক।’
কলকাতা তো বটেই, আশপাশের শহর, মফস্সল, এমনকি ভিন্রাজ্য থেকেও অনেকে এসেছেন পার্ক স্ট্রিটের আলোকসজ্জা দেখতে। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই একটু একটু করে ভিড় বাড়তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট চত্বরে। সময় যত এগিয়েছে, তত বেড়েছে ভিড়। কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউ এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ বা ভিন্রাজ্য থেকে আসা বন্ধুদের নিয়ে এসেছেন পার্ক স্ট্রিটের আলো দেখতে। আট থেকে আশি, কারও মধ্যেই উৎসাহ আর উদ্দীপনার কোনও অভাব নেই।
কেউ যাদবপুর, কেউ নিউটাউন, কেউ সল্টলেক, কেউ আবার এসেছেন বারাসত থেকে। রাস্তার ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কেউ নিজস্বী তুলছেন, গল্প করছেন, আড্ডা দিচ্ছেন বন্ধুদের সঙ্গে। কেউ আবার তুলছেন আলোকসজ্জার ছবি। পথচলতি গাড়ি থেকেও মোবাইল বার করেও ছবি তুলছেন অনেকে। তবে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তুলতে দিচ্ছে না পুলিশ। গোটা পার্ক স্ট্রিট চত্বর ছেয়ে রয়েছে পুলিশে। ভিড় যাতে রাস্তায় নেমে না-প়ড়ে, তা দেখার জন্য যেমন পুলিশ রয়েছে, তেমনই রাস্তায় ট্রাফিক সামলানোর জন্যও মোতায়েন রয়েছেন পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী।
পার্ক স্ট্রিট চত্বরে একটি বড় অংশ রাস্তার ধার দিয়ে ব্যারিকেড করে রেখেছে পুলিশ। ফুটপাথের পাশাপাশি রাস্তার ব্যারিকেডে ঘেরা অংশও পথচারীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ। তবে যে পরিমাণ ভিড় হয়েছে, তাতে লোকজনকে ঠেলে এগোনোর মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে ফুটপাথে। ভিড় সামাল দিতে প্রয়োজন মতো রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণও করছে পুলিশ। যেমন রাত সাড়ে ৮টার দিকে পার্ক স্টিট থেকে মল্লিকবাজারমুখী রাস্তা সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি বুঝে তারা প্রয়োজন মতো যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে।
যাঁরা বাড়ি থেকে সান্টা টুপি বা রঙিন চশমা নিয়ে আসেননি, অথচ ভিড়ের মধ্যে সকলকে দেখে পরতে ইচ্ছা করছে— তাঁদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। শখপূরণের জন্য পকেটে অল্প কিছু টাকা থাকলেই চলছে। ফুটপাথের ধারে সান্টা টুপি, মাথার ব্যান্ড, রঙিন আলোর চশমার পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেক বিক্রেতাই। সেখান থেকে কিনছেনও অনেকে।
নিউটাউনের বাসিন্দা মৃত্তিকা খাঁ-র স্বামীর অফিস পার্ক স্ট্রিট চত্বরেই। সন্ধ্যায় সন্তানকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটে চলে এসেছেন মৃত্তিকা। স্বামীর অফিস ছুটির পরে তিন জন মিলে ঘুরছেন। আবার বন্ধুদের সঙ্গে আলোকসজ্জা দেখতে এসেছেন সৌরশ্রী বণিক। বাড়ি ত্রিপুরায়। পড়াশোনার সূত্রে কলকাতায় থাকেন। ত্রিপুরা থেকে তাঁর দুই বন্ধু এসেছেন কলকাতায়। তাঁদের বড়দিনের আলো দেখাতে পার্ক স্ট্রিটে নিয়ে এসেছেন সৌরশ্রী। ভিন্রাজ্য থেকে এলেও পার্ক স্ট্রিটের এমন ভিড়ে কোনও সমস্যাই হচ্ছে না সৌরশ্রীর বন্ধুদের। জানালেন, তাঁরাও বেশ উপভোগই করছেন।
বড়দিনের পার্ক স্ট্রিট চত্বর ভিড়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে থাকে রসনাতৃপ্তি। এখানে বেশ কিছু নামী রেস্তরাঁ রয়েছে। বড় দিনের মরসুমে স্বাভাবিক ভাবেই সেগুলিতে প্রচুর বুকিং রয়েছে। ফলে রেস্তরাঁয় টেবিল পেতে অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। উৎসবের মরসুমে যেমনটা ফি বছর হয়ে থাকে। তাই অনেকে রেস্তরাঁয় টেবিল পাওয়ার অপেক্ষা না করে ভিড় জমিয়েছেন রোলের দোকানগুলিতে। পার্ক স্ট্রিট চত্বরে রোলের বেশ কিছু নামি দোকন রয়েছে। সন্ধ্যার দিকে ওই দোকানগুলির সামনে জটলা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভিড় এবং ট্রাফিক সামাল দেওয়ার জন্য গোটা পার্ক স্ট্রিট চত্বরে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যত্রতত্র রাস্তা পার হওয়ার উপায় নেই। পার্ক স্ট্রিটের মোড়, স্টিফেন কোর্ট, অ্যালেন পার্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় রাস্তা পারাপার করতে দেওয়া হচ্ছে পথচারীদের। অনেকে পার্ক স্টিট দিয়ে এসে অ্যালেন পার্ক হয়ে ক্যামাক স্ট্রিট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ আসছেন উল্টো পথে। তাঁরা ক্যামাক স্ট্রিট দিয়ে এসে অ্যালেন পার্ক হয়ে পার্ক স্ট্রিট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। তবে বাস ধরার জন্য ক্যামাক স্ট্রিটের দিকেই যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ।