মুম্বইয়ে পুরভোটের আগে জোট ঘোষণা উদ্ধব ও রাজ থ্যাকারের, দীর্ঘ দু’দশক পর ‘রাজনৈতিক পুনর্মিলন’
বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
মুম্বই: গত জুলাই মাসে হয়েছিল দুই দলের যৌথ ‘বিজয় সমাবেশ’। কারণ, তাদের যৌথ চাপের মুখেই প্রাথমিক স্কুলশিক্ষায় হিন্দি বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছিল মহারাষ্ট্রের এনডিএ সরকার। তখন থেকেই শুরু হয়েছিল জল্পনা। অবশেষে বিগত পাঁচ মাসের সেই জল্পনার অবসান হল বুধবার। কারণ, এদিন আনুষ্ঠানিকভাবে থ্যাকারে পরিবারের রাজনৈতিক ও পারিবারিক পুনর্মিলনের সাক্ষী হল মহারাষ্ট্র। দীর্ঘ দুই দশকের ‘বিচ্ছেদে’র অবসান ঘটিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যের বার্তা তুলে ধরলেন দুই ভাই। এদিন মুম্বইয়ের একটি বিলাসবহুল হোটেলে ফের একমঞ্চে এলেন শিবসেনা (ইউবিটি) প্রধান উদ্ধব থ্যাকারে ও মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার (এমএনএস) সভাপতি রাজ থ্যাকারে। আগামী ১৫ জানুয়ারি বৃহন্মুম্বই পুরনিগমের (বিএমসি) নির্বাচনের আগে দুই দলের মধ্যে জোটের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন তাঁরা। অবিভক্ত শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত বাল থ্যাকারের ছেলে ও ভাইপোর এই পুনর্মিলন মারাঠি রাজনীতির মানচিত্রে নিশ্চিতভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আর এই সংযুক্তির হাতিয়ার হিসেবে ‘মারাঠি অস্মিতা’র পুরোনো ওষুধই ব্যবহার করেছেন থ্যাকারে ভ্রাতৃদ্বয়। যদিও ক্ষমতাসীন মহাযুতি শিবিরের কটাক্ষ, মারাঠি স্বার্থ নয়, রাজনৈতিক অস্তিত্বরক্ষাই আসল লক্ষ্য তাঁদের।
এদিন সকালে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দাদা উদ্ধবকে পাশে নিয়ে রাজ থ্যাকারে বলেন, আমি আনুষ্ঠানিকভাবে (১৫ জানুয়ারির নির্বাচনের জন্য) শিবসেনা ও এমএনএসকে জোটসঙ্গী হিসেবে ঘোষণা করছি। মুম্বই একজন মারাঠি মেয়র পাবে। তিনি শিবসেনা-এমএনএস জোটের হবেন। ভাই রাজের মতোই আত্মবিশ্বাসের সুর উদ্ধবের কণ্ঠেও। তাঁর মুখে ‘মারাঠি মানুষ’ ও মহারাষ্ট্রের কথা উঠে এল বারবার। উদ্ধবের গর্জন, যাই হোক না কেন, মুম্বই আমাদের পাশেই থাকবে। দিল্লির শাসকদের ‘চক্ষুশূল’ হয়ে পড়েছে মুম্বই। তাই দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ফের জোটবদ্ধ থ্যাকারে ভাইরা। আর এরপরই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ‘বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে’ স্লোগানকে নয়া আঙ্গিকে তুলে ধরেন উদ্ধব। বলেন, ‘বিজেপি বলে বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে। আমি বলি, চুকাল তার সাম্পাল (আজ ভুল করলে সব শেষ)।’
উদ্ধব এদিন জানিয়েছেন, মুম্বই ও নাসিক সহ অন্য পুরসভাগুলির নির্বাচনে এমএনএসের সঙ্গে তাঁর দলের আসন সমঝোতা সংক্রান্ত ফর্মুলা চড়ান্ত হয়েছে। তবে তিনি এবিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। যদিও সূত্রের খবর, ১৪৫-১৫০টি আসনে লড়তে পারে উদ্ধবের শিবসেনা (ইউবিটি)। ৬৫-৭০টি আসনে প্রার্থী দিতে পারে রাজের দল। জোটের অন্য শরিক হিসেবে ১০-১২টি আসন পেতে পারে এনসিপি। থ্যাকারে ভাইদের এই রাজনৈতিক পুনর্মিলন নিয়ে এদিন খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিজেপি নেতা মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। তিনি বলেন, ওনারা একত্রে আসায় আমি খুশি। তবে বড় কোনও পার্থক্য গড়ে দেবেন ভাবলে তা বালখিল্য হবে। আমার মনে হয় না কোনও পরিবর্তন হবে। উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধের ঠেস, শুধুমাত্র ক্ষমতার মোহে একত্রে এসেছেন থ্যাকারে ভাইরা। মুম্বইয়ের উন্নয়ন নিয়ে কোনও ভাবনা তাঁদের নেই। ঘটনাচক্রে, এদিনই আবার এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার শিবির থেকেও কাকা শারদ পাওয়ার শিবিরের সঙ্গে সমঝোতা সংক্রান্ত জল্পনা উসকে দেওয়া হয়েছে। ছবি: পিটিআই