• ‘সেঙ্গারের জামিন মানে আমাদের মৃত্যু’, সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ উন্নাওয়ের নির্যাতিতা
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি:  ‘ওর জামিন মানে আমাদের মৃত্যু।’ বলছিলেন নির্যাতিতা ও তাঁর মা। তখন নির্যাতিতাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাচ্ছে দিল্লি পুলিশ। আর মাকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন সিআরপিএফ আধিকারিকরা। মঙ্গলবার রাত থেকে এমনই সব ঘটনার সাক্ষী থাকল রাজধানী দিল্লি। উন্নাও ধর্ষণকাণ্ডে দোষী প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের জামিনের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাতে ইন্ডিয়া গেটের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন নির্যাতিতা ও তাঁর মা। অপরাধ এটুকুই। সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। এখানেই শেষ নয়। বুধবার রাস্তায় ফেলে হেনস্তা করা হয় তাঁদের। এনিয়েই দেশজুড়ে নিন্দার ঝড়। এরই মধ্যে ন্যায়বিচারের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্যাতিতা। 

    এদিন সকালে মান্ডি হাউসে সাংবাদিক বৈঠক করার কথা ছিল মা ও মেয়ের। কিন্তু তাতেও বাধা দেয় প্রশাসন।  সিআরপিএফের তরফে জানানো হয়, তাঁরা হয় যন্তর-মন্তরে যেতে পারেন, নয়তো বাড়ি ফিরতে পারেন। এখানে অবস্থান বিক্ষোভের কোনও অনুমতি নেই। এরপরই বচসা শুরু হয়। বাস থেকে নির্যাতিতার মাকে ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি মাঝ রাস্তায় নির্যাতিতাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হয়। নির্যাতিতার কথায়, ‘সেঙ্গারের জামিন ও দিল্লি হাইকোর্টের রায় আমাদের কাছে মৃত্যুর সমান। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ওইদিন নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পরিবারের কথা ভেবে পিছিয়ে যাই। আসলে ভোট আসছে। তাই এই অপরাধীকে জামিন দেওয়া হল। যাতে তার স্ত্রী ভোটে দাঁড়াতে পারে। একজন ধর্ষক যদি এভাবে বাইরে ঘুরে বেড়ায়, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছি।’

    পুরো ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। দিল্লিতে নির্যাতিতার ধরনা নিয়ে রীতিমতো রসিকতা করেন যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী ওপি রাজভর। হাসতে হাসতে বলেন, ‘ওখানে কী? ওর বাড়ি তো উন্নাও।’এরইমধ্যে নির্যাতিতাকে হেনস্তার প্রতিবাদে সরব লোকসভা বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী।  তাঁর প্রশ্ন, ‘একজন নির্যাতিতার সঙ্গে এই ধরনের আচরণ কি ন্যায়সঙ্গত? ধর্ষককে জামিন দেওয়া হচ্ছে আর ধর্ষিতার সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে! আমরা শুধু মৃত অর্থনীতির শিকার নই। আমরা একটা মৃত সমাজে বসবাস করছি।’ পরে ১০ জনপথে সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে রাহুলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নির্যাতিতা ও তাঁর মা। এর আগে নির্যাতিতা বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে চাই। আমি বিচার চাই।’ দিল্লি হাইকোর্ট সেঙ্গারের সাজায় স্থগিতাদেশ দিয়েছে। জামিনও মঞ্জুর হয়েছে। তা নিয়ে ক্ষোভ ফুঁসছেন নির্যাতিতা। তাঁর দাবি, এমন রায় এর আগে দেশে আর কোনও আদালত দেয়নি। ওই রায়ে আমাদেরই ঘরবন্দি করে দেওয়া হয়েছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)