অনাস্থা ‘নাটক’ জমিয়ে শহরে হাজির বিদ্রোহীরা, সটান এসপি’র অফিসে কাউন্সিলাররা
বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
গোপাল সূত্রধর, বালুরঘাট: অনাস্থা নিয়ে টানাপোড়েনের মাঝে নয়া মোড়। বুধবার হঠাৎ বালুরঘাট শহরে হাজির হলেন বিদ্রোহী ১৫ জন কাউন্সিলার। তাঁরা এদিন সোজা চলে যান পুলিশ সুপারের অফিসে। সূত্রের খবর, অশোক মিত্র পন্থী তৃণমূলের বেশকিছু নেতা বিদ্রোহী কাউন্সিলারদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ। তাই নিরাপত্তার দাবিতেই এসপির দ্বারস্থ হয়েছেন বিদ্রোহীরা।
এদিন ‘নিখোঁজ’ কাউন্সিলাররা শহরে পা রাখার পর কয়েক ঘণ্টা ছিল টানটান উত্তেজনা। বিদ্রোহীদের নেতৃত্বে ছিলেন মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বিরোধী গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ প্রাক্তন তৃণমূল জেলা সভাপতি মৃণাল সরকার, জেলা সহ সভাপতি তথা টাউন সভাপতি সুভাষ চাকী, টিএমসিপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি অমরনাথ ঘোষ সহ অন্যরা। পুলিশ সুপারের অফিস থেকে বেরিয়ে ১৫ জন কাউন্সিলার প্রায় তিনশো মিটার পথ হেঁটে কার্যত মিছিল করে রওনা হন পুরসভায়। সেখানে কাউন্সিলারদের ঘরে বসে পড়েন তাঁরা। এদিকে ওই ঘরেই ছিলেন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অশোকপন্থী নীতা নন্দী সহ আর দুই কাউন্সিলার। তাঁরা বিদ্রোহীদের দেখেই বেরিয়ে যান ঘর থেকে। এরপরেই শুরু হয় বিদ্রোহী কাউন্সিলারদের বৈঠক। তবে, এনিয়ে তাঁরা কেউই মন্তব্য করতে চাননি। সুভাষ ও মৃণালের বক্তব্য, যা বলার রাজ্য নেতৃত্ব বলবে। আমরা ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম। সকলের সঙ্গে এমনিই দেখা করেছি।
এদিন আবার বালুরঘাট শহরে মহিলা মহাবিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিপ্লব। তাঁর কাছেও এব্যাপারে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। দলীয় বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি। শুধু বলেন, যা বলার জেলা সভাপতি বলবেন। তাঁর সংযোজন, এভাবে অনাস্থা আনা হলে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে যেটাই করুন, ভেবেচিন্তে করুন। কারণ সামনেই বিধানসভা নির্বাচন।
পুরসভা সূত্রে খবর, অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছিলেন ১৪ জন বিদ্রোহী কাউন্সিলার। তাঁদের সঙ্গে এক মহিলা কাউন্সিলার যোগ দেওয়ায় সেই সংখ্যা ১৫। ফলে চেয়ারম্যান অশোক মিত্রের পক্ষে থাকছেন মাত্র ৭ জন। বাকি দুই বাম কাউন্সিলার কোনও পক্ষেই নেই। ফলে এখন দলে ভারী বিদ্রোহীরাই।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তৃণমূল কংগ্রেস একাধিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। বিপ্লবের সঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রী শংকর চক্রবর্তী, প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ, প্রাক্তন দুই জেলা সভাপতি মৃণাল এবং গৌতম দাস গোষ্ঠীর কোন্দল বারবার সামনে আসে। পুরসভায় বিপ্লব গোষ্ঠীর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থার ঘটনায় প্রকাশ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন বিরোধী নেতারা। ফলে বালুরঘাট শহরে বিপ্লব গোষ্ঠী এখন কার্যত কোণঠাসা। তাই এদিন মন্ত্রীকে শহরে পেয়ে বেশকিছু ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলার পরামর্শ নিতেও ছোটেন। এই অনাস্থা থেকে বাঁচতে তাঁরাও গোপন বৈঠক করছেন বলে খবর।
তবে, জটিলতা এখনই কাটার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী, বৈঠক ডাকার জন্য চেয়ারম্যানের হাতে ১৫ দিন থাকে। তারমধ্যে তিনদিন পার হয়েছে। তিনি বৈঠক না ডাকলে ভাইস চেয়ারপার্সন ডাকবেন। যেহেতু পুরসভায় ভাইস চেয়ারপার্সন নেই, তাই অনাস্থা আনা তিনজন কাউন্সিলারও শেষে বৈঠক ডাকতে পারেন। পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার অজয় প্রসাদ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বালুরঘাট পুরসভার বিদ্রোহী কাউন্সিলাররা পুলিশ সুপারের অফিস থেকে বেরিয়ে আসছেন।-নিজস্ব চিত্র