সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: লরি চালক, ফেরিওয়ালা, মহিলার পর ‘ফুড ডেলিভারি বয়’। এবার উত্তরবঙ্গে খাবার সরবরাহকারীদের ছদ্মবেশে পাচার করা হচ্ছে মাদক। বিরিয়ানি, চিকেন ললিপপ, চিকেন চাপ প্রভৃতি খাবারের প্যাকটের আড়ালে চলছে পাচার। শুধু তাই নয়, অ্যাম্বুলেন্স, মেডিসিন পার্সেল ভ্যান ও ক্যুরিয়ারের মাধ্যমেও মাদকের কনসাইনমেন্ট চালান করা হচ্ছে। মাদক পাচারের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে এমন তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। একই সঙ্গে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি মাদক পাচারকারীদের ঘাঁটি। তারা বাড়ি ভাড়া নিয়ে খাবার সরবরাহ, পার্সেল ভ্যান সহ বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করছে।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের এক ডিসিপি বলেন, গাঁজা, কাফ সিরাপ, ব্রাউন সুগার সহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচারে নিত্যনতুন কৌশল নিচ্ছে কারবারিরা। তা রুখতে পুলিশ সর্বদা সতর্ক রয়েছে। নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো সহ বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে মাদক কারবারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। দার্জিলিংয়ের পুলিশ সুপার প্রবীণ প্রকাশ জানান, মাদক কারবারের বিরুদ্ধে তাঁরা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছেন। সম্প্রতি মাদক পাচারে ধৃত ডেলিভারি বয়কে নিয়ে তদন্ত চলছে।
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার শিলিগুড়ি মাদক কারবারিদের ঘাঁটি। কারণ শহরের ভৌগোলিক অবস্থান। এই শহরের পাশেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও বাংলাদেশ। এখান থেকে প্রতিবেশী রাজ্য বিহার ও সিকিমেও সহজে যাওয়া যায়। এজন্য লরি চালক, ফেরিওয়ালা ও মহিলাদের মাধ্যমে এই শহর দিয়ে পাচার হচ্ছে মাদক। এবার এই কৌশলে বদল এনেছে মাদক সিন্ডিকেট। তারা এখন খাবার ডেলিভারি বয়, মেডিক্যাল পার্সেল ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স ও ক্যুরিয়ারের মাধ্যমে বিহার, পাহাড় সহ সমতলের নেপাল এবং বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি ছাড়াও কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর, মালদহে মাদক পাচার করছে।
তিনদিন আগেই খড়িবাড়িতে ১ কেজি ব্রাউন সুগার সহ খাবার ডেলিভারি বয়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম সুজিত হাঁসদা। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনে ধৃতের বাড়ি। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, তিন বছর ধরে মাটিগাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে ছিল ধৃত ডেলিভারি ভয়। সে বিরিয়ানি, চিকেন ললিপপ সহ বিভিন্ন খাবারের প্যাকেটের আড়ালে মাদকের কনসাইনমেন্ট পাচার করত। সহজে মোটা অংকের টাকা কামানোর টোপে সে মাদক পাচারে নেমেছিল।
এদিকে, বৃহস্পতিবার শহরের একটিয়াশালে একটি মেডিসিন পার্সেল ভ্যানে তোলার সময় ১১ হাজার বোতল কাফ সিরাপ বাজেয়াপ্ত করে ভক্তিনগর থানার পুলিশ। তারা শুভঙ্কর দাস ও কানাই শীল নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে। প্রথমজন মেদিনীপুর ও দ্বিতীয়জন দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। ভক্তিনগরের হাতিয়াডাঙা ও ভোলানাথপাড়ায় তারা ভাড়া বাড়িতে থাকত। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ওই মেডিক্যাল পার্সেল ভ্যানে কাফ সিরাপ পাহাড়ে চালান করা হচ্ছিল।
এরবাইরে এখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স, ক্যুরিয়ার প্রভৃতিতেও মাদক পাচার করা হচ্ছে বলে সন্দেহ। এরসঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজন পুলিশ ও গোয়েন্দাদের র্যাডারে রয়েছে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজর এড়াতেই এমন অভিনব কৌশলে পাচার চালাচ্ছে মাদক সিন্ডিকেট।