সংবাদদাতা মালদহ ও ইসলামপুর: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির পুরস্কার পাচ্ছেন গৌড়বঙ্গের তিন সাহিত্যিক। তিন নারীর এই সম্মান প্রাপ্য বলে একবাক্যে জানাচ্ছে সাহিত্য মহল। মালদহের সাহিত্যিক তৃপ্তি সান্ত্রা, অনুরাধা কুণ্ডা এবং উত্তর দিনাজপুর জেলার ইসলামপুরের মনোনীতা চক্রবর্তী এবার বাংলা আকাদেমির শান্তি সাহা স্মারক সম্মান, সুধা বসু স্মারক সম্মান এবং ক্ষুদ্র পত্রিকা সম্মানের জন্য মনোনীত হয়েছেন।
পুরাতন মালদহ আহ্লাদমণি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষিকা তৃপ্তির সাহিত্য জীবন পাঁচ দশকের বেশি সময়ের। মালদহের বার্লো বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় স্কুল ম্যাগাজিনে সাহিত্য জীবনের অঙ্কুরোদ্গম তৃপ্তির। সেই সময় তাঁর লেখা এতটাই প্রভাব ফেলত পাঠক-পাঠিকার উপর, কেউ কেউ সেই লেখা কণ্ঠস্থ করে ফেলতেন। নিটোল গদ্য সাহিত্যে বারবার মুগ্ধ করেছেন তিনি। বলেন, আমার সাহিত্য আবর্তিত হয় মূলত মানুষকে ঘিরে। মানুষের লড়াই, বেঁচে থাকা, ঘুরে দাঁড়ানোর আখ্যান তুলে ধরতে চেয়েছি লেখায়। আজও সেটাই চাই।
তৃপ্তি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৬ সালে। এছাড়াও হিতেন নাগ স্মৃতি পুরস্কার, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কারও পেয়েছেন ৭০ বছরে পা রাখতে চলা এই জনপ্রিয় সাহিত্যিক। কোরক পত্রিকায় তৃপ্তিকে নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়েছে। শিলচর এবং গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা গবেষণা করছেন তাঁর সাহিত্য নিয়ে। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং আগরতলার লেখিকাদের সাক্ষাত্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। বাংলা আকাদেমির সম্মান প্রাপ্তিতে খুশি তৃপ্তি। মাধ্যম বদলালেও বাংলায় লেখালেখি করা আজকের প্রজন্মকে নিয়ে আশাবাদী তিনি। এই সম্মাননা উত্সর্গ করেছেন অমৃতলোক পত্রিকার প্রয়াত সম্পাদক সমীরণ মজুমদারকে।
মালদহ কলেজে ইংরেজি অধ্যাপনার সঙ্গে কয়েক দশক ধরে যুক্ত অনুরাধা কুণ্ডা লিখছেন শৈশব থেকেই। প্রায় চার দশক ধরে সৃষ্টিসুখের উল্লাসে লিখে চলা অনুরাধা আগে লিখতেন নিজের তাগিদে। তাঁর ‘বিষয় নারী’ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় নব্বইয়ের দশকের প্রায় শেষে। গদ্য সাহিত্যের পাশাপাশি একের পর এক কবিতাও লিখে চলেছেন তিনি।
অনুরাধার লেখা ছুঁয়ে যায় বৈচিত্র্যের বহুস্তরকে। শ্রমজীবী, প্রান্তিক নারীর জীবনীশক্তি, বেঁচে থাকার লড়াই তাঁকে অনুরণিত করে লেখিকা হিসাবে। দু’টি খণ্ডে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘করোনাকালীন’ সারা ভারতবর্ষের শ্রমজীবী মানুষের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করে বিপুল সমাদৃত হয় পাঠক মহলে।
অনুরাধা তাঁর নাটক ‘মহাভারতের মেয়ে’তে তুলে ধরেছেন মহাকাব্যে উপেক্ষিত একের পর এক নারী চরিত্রকে। বাংলা আকাদেমির পুরস্কার উৎসর্গ করেছেন তাঁর পাঠকদের। আজকের সাহিত্য সৃষ্টিতে অনন্ত সম্ভাবনাও দেখছেন তিনি। লেখালেখির ঘরানা বদল নিয়েও উচ্ছ্বসিত অনুরাধা। এর আগে ‘দিবারাত্রির কাব্য’ সম্মান পেয়েছেন ২০১৮ সালে। এই সম্মাননা তাঁকে তৃপ্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন অনুরাধা।
বাংলা আকাদেমির এই সম্মাননা ভালোলাগা তৈরির পাশাপাশি তাঁর দায়বদ্ধতা অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মনে করেন ছোটবেলা থেকে সাহিত্য সৃষ্টির জগতে পা রাখা মনোনীতা চক্রবর্তী। প্রাথমিক শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত মনোনীতা বলেন, সন্তান ধারণের মধ্যে মায়ের যে আনন্দ, এই পুরস্কার তেমনই তৃপ্তি দিচ্ছে। এই সম্মাননা তিনি পাচ্ছেন ক্ষুদ্র পত্রিকা ‘দাগ’ এর জন্য। তিন প্রজন্মের তিন কন্যার শব্দগান পত্রিকাটিও মনোনীতা, তাঁর মা ও কন্যাদের যৌথ সৃষ্টি। লেখালেখির বাইরে নিজের তৈরি ‘শিল্প’ সাংস্কৃতিক সংস্থা সক্রিয়ভাবে চালান মনোনীতা।