• সস্তার কাফ সিরাপের পাচার বাড়ছে সীমান্তে
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • অগ্নিভ ভৌমিক, কৃষ্ণনগর: বাংলাদেশে সস্তার কাফ সিরাপের চাহিদা বাড়তে থাকায় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে পাচারের প্রবণতা নতুন করে মাথাচাড়া দিচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক মাদক মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, পুরনো পরিচিত কোম্পানির বদলে এখন নতুন ব্র্যান্ডের কাশির সিরাপ সীমান্ত দিয়ে পাচার করা হচ্ছে। বর্তমানে উইংস ফার্মাসিউটিক্যালের ওয়ানরেক্স, উইনসিরেক্সের মতো ব্র্যান্ডের কাশির সিরাপ সীমান্তে পাচারের জন্য আমদানি করা হচ্ছে।

    গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন এই ব্র্যান্ডের কাশির সিরাপের ভারতীয় বাজারমূল্য প্রায় ১৪০টাকা। এর আগে যে কাশির সিরাপ পাচার হত, তার দাম ছিল প্রায় ২১০টাকা। কিন্তু কম দামের নতুন এই সিরাপ চোরাপথে বাংলাদেশে পৌঁছে সাত থেকে ন’গুণ বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সূত্রের দাবি, আগে এক বোতল কাশির সিরাপ বাংলাদেশে ১৫০০-১৮০০টাকায় বিক্রি হত। নতুন ব্র্যান্ডের সিরাপ আসায় চোরাই বাজারে দাম কিছুটা কমেছে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। বর্তমানে বাংলাদেশে ওই সিরাপের বিক্রিমূল্য আনুমানিক ১০০০-১২০০টাকায় নেমে এসেছে। যদিও এই নতুন কোম্পানির লোগো সাঁটানো সস্তার কাশির সিরাপ বাস্তবে আদৌ সেই ব্র্যান্ডের কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

    গত ১৪ ডিসেম্বর ১০০বোতল নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ সহ এক পাচারকারীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বাদলাঙ্গী এলাকার জাহাঙ্গির শেখ নামে এক পাচারকারী ধরা পড়ে। ঘটনার দিন দুপুরের দিকে একটি ট্রাভেল ব্যাগে করে নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ নিয়ে স্কুটিতে পদ্মমালা থেকে হৃদয়পুরের দিকে যাচ্ছিল অভিযুক্ত। কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে ওই কাশির সিরাপ পাচার করাই ছিল তার উদ্দেশ্য। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে চাপড়া থানার পুলিশ সীমান্তবর্তী মোরমালা এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে জাহাঙ্গিরকে আটক করে। তল্লাশি চালিয়ে তার ব্যাগ থেকে ১০০বোতল নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ উদ্ধার হয়। কাশির সিরাপের বোতলে উইংস ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির উইনসিরেক্স ব্র্যান্ডের স্টিকার লাগানো ছিল।

    আবার তার ঠিক কয়েকদিন আগে ২৪ নভেম্বর কৃষ্ণগঞ্জের তারকনগর এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ কাশির সিরাপ উদ্ধার করে। অভিযানে ন’টি কার্টনের মধ্যে মোট ১০৩৯বোতল কাশির সিরাপ উদ্ধার হয়। সিরাপ পাচারের অভিযোগে মোট পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। ধৃতরা হল রেখা বিশ্বাস, রাজু অধিকারী, বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, জিতু বিশ্বাস ও সুদীপ মালাকার। তাদের বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জ, চাকদহ, বানপুর, পুট্টিখালি ও ধরমপুরের বিভিন্ন এলাকায়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি অটোয় করে হাঁসখালি সীমান্তের দিকে নিষিদ্ধ ওই কাশির সিরাপ পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশ তদন্তে দেখেছে, এই ঘটনায় বাজেয়াপ্ত হওয়া কাশির সিরাপ উইংস ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির। কিন্তু এক্ষেত্রে সিরাপের ব্র্যান্ড হল ওয়ানরেক্স।‌

    পুলিশ জানিয়েছে, এতদিন কাশির সিরাপের বোতলে অ্যাবটের মতো নামী কোম্পানির স্টিকার থাকত। কিন্তু এই প্রথম নতুন ব্র্যান্ডের কাশির সিরাপ সীমান্তে পাচারের জন্য আমদানি করা হয়েছে। এমনকি, এক্ষেত্রে উইংস কোম্পানির যে লোগো রয়েছে, তা আসলটির থেকে অনেকটাই আলাদা।

    সম্প্রতি ২২ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশ পুলিশ মির্জাপুর ও ইটা জেলা থেকে এই একই কোম্পানির প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার কাশির সিরাপ উদ্ধার করেছে। তাতেও উইংসের নাম লেখা রয়েছে। যদিও ব্যাচ নম্বরগুলি মুছে ফেলা হয়েছিল। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)