আসানসোলে ৭৯ বছরের বৃদ্ধাকে ১৮ কিমি দূরে শুনানি কেন্দ্রে তলব, প্রতিবাদ তৃণমূলের
বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: মলানদিঘির বৃদ্ধা পুষ্পলতা কেশ। ৭৯ বছর বয়সে নার্ভের সমস্যায় ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারেন না। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকা পুষ্পলতার নামে এসেছে নির্বাচন কমিশনের ফরমান। নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে তাঁকে যেতে হবে ১৮ কিলোমিটার দূরের কাঁকসা ব্লক অফিসে। পুষ্পলতার মতো জেলার প্রায় দেড় লক্ষ ভোটারের কাছে ধাপে ধাপে নেটিশ পাঠাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। তাঁদের কমিশন নিধারিত ১২টি নথির যে কোনও একটি নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে। এই জটিল শুনানি প্রক্রিয়া করতে মাত্র ৩৮টি শুনানি কেন্দ্র করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকে এর বিরোধিতা করে তৃণমূল, সিপিএম ও কংগ্রেস। সম্মতি জানিয়েছে বিজেপি।
রানিগঞ্জ শহর ও অণ্ডাল ব্লকজুড়ে রয়েছে রানিগঞ্জ বিধানসভা এলাকা। এই বিধানসভার ১৫ হাজার ৭১১ জনকে শুনানিতে ডাকা হচ্ছে। এইআরওর কাছে নথি নিয়ে গিয়ে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে তাঁদের। তার জন্য মাত্র তিনটি কেন্দ্র ঠিক হয়েছে— রানিগঞ্জ গার্লস কলেজ, টিডিবি কলেজ ও অণ্ডাল বিডিও অফিস। দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় শুনানিতে ডাকা হচ্ছে ১৫ হাজার ১৪০ জনকে। সে জন্য এসডিও অফিস, সিটি সেন্টারের হর্টিকালচার অফিস ও সাধুডাঙা ইরিগেশন অফিসকে শুনানি কেন্দ্র করা হয়েছে। সালানপুর ও বারাবনি দু’টি ব্লক ও চিত্তরঞ্জন শহর নিয়ে গঠিত বারাবনি বিধানসভা এলাকাতেও মাত্র তিনটি শুনানি কেন্দ্র করা হয়েছে। দুর্গাপুর পূর্বের জন্য চারটি, পাণ্ডবেশ্বর, জামুড়িয়া, আসানসোল দক্ষিণ, আসানসোল উত্তর, কুলটির জন্য পাঁচটি করে শুনানি কেন্দ্র করা হয়েছে। এনিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে বিস্তারিত নথি তুলে ধরা হয় আসানসোল জেলাশাসক অফিসে। এই তথ্য সামনে আসতেই তীব্র প্রতিবাদ জানায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। তাঁরা অভিযোগ করেন, কমিশন মুখে একজনও যোগ্য ভোটারের নাম বাদ না দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তাঁরা মানুষের নাম বাদ দিতে সচেষ্ট বিজেপির কথায়। নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে কংগ্রেস ও সিপিএমও। তাঁরা দাবি জানিয়েছে, সাধারণ মানুষকে বহু দূরের শুনানি কেন্দ্রে যেতে হবে। তাঁদের আরও কাছের কোনও কেন্দ্রে শুনানির ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও বিজেপি প্রতিনিধিরা এই ব্যবস্থায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
জেলায় এমন অনেক যোগ্য ভোটার রয়েছেন, যাঁদের নাম খসড়া ভোটার তালিকায় নেই। জীবিত মানুষকে মৃত, নিখোঁজ দেখানো হয়েছে। কমিশনের নির্দেশ মেনে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করেও তাঁদের খসড়া তালিকায় নাম ওঠেনি। এ নিয়েও সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিনিধিরা। কমিশন জানিয়েছে, সেই সব ভোটারদেরই ফর্ম ৬ পূরণ করে নতুন করে নাম তোলাতে হবে। নির্বাচন কমিশনের ভুলে নাম বাদ গেলেও কেন ভোটারকে হয়রানি করে নাম তুলতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের শাসক দলের প্রতিনিধিরা। প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৬৯৬ ভোটারের শুনানি করার জন্য প্রতি বিধানসভা এলাকা থেকে দশটি করে শুনানি কেন্দ্রর নাম নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা তা মঞ্জুর করেনি। জেলাশাসক জানিয়েছে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল শুনানি কেন্দ্র বাড়ানোর দাবি করেছেন। আমরা কমিশনের নজরে বিষয়টি আনব।
তৃণমূল প্রতিনিধি আকাশ মুখোপাধ্যায়,অধীর গুপ্ত বলেন, কমিশন যোগ্যদের নাম বাদ দিতে এই ফন্দি এঁটেছে। কংগ্রেস জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, আরও বেশি শুনানি কেন্দ্রর দাবি করেছি। একই কথা বলেন সিপিএমের প্রতিনিধি মনোজ দত্ত। বিজেপি নেতা তাপস রায় বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি।