• দুর্নীতির অভিযোগ তুললেও দলের জেলা সভাপতির দাবি খারিজ পদ্মনেতা নিখিলের
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: তারাপীঠ মন্দির ইস্যুতে দলের জেলা সভাপতির বক্তব্যকে সমর্থন করলেন না সেবাইত তথা বিজেপির জেলা সহ সভাপতি নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। গত রবিবার সিউড়িতে এই নিখিলবাবুকে পাশে বসিয়ে জীবিতকুণ্ড সংস্কার, মন্দির ও শ্মশানের টাকা তৃণমূলের পার্টি ফান্ডে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা। বুধবার তারাপীঠ মন্দিরে সাংবাদিক সম্মেলনে সেই প্রশ্নের উত্তরে নিখিলবাবু বলেন, ‘সেটা আমি বলতে পারব না। ওই টাকা পার্টি ফান্ডে না অন্য কোথায় যায়, সেটা বলার ক্ষমতা আমার নেই।’ 

    এদিন মন্দিরের অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য নিখিলবাবু। গত নির্বাচনে তিনি হাসন কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এদিন তিনি বলেন, মন্দিরের রেজুলেশন অনু্যায়ী তিন বছর অন্তর কমিটি ভেঙে নতুন করে গঠন করতে হবে। কিন্তু ১৫ বছর ধরে একই কমিটি দখলদারের মতো বসে রয়েছে। একবছর হল উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। তাতে শুনেছি আমার নাম রয়েছে। কিন্তু কোনও মিটিংয়ে ডাকা হয় না। আগের কমিটি ঠিকঠাকভাবে চালাচ্ছিল। কিন্তু উপদেষ্টা কমিটি হওয়ার পর কোটি কোটি টাকার হিসেব নেই। আমি চ্যালেঞ্জ করছি, ওরা অ্যাকাউন্টে কোনও টাকা রাখে না। কোটি কোটি টাকা তাঁদের কাছেই রেখে দিয়েছেন। অসত্য হলে আমার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিক। আর মন্দিরে টিআরডিএ’র কোনও প্রয়োজন নেই। মন্দিরের টাকাতেই মন্দিরের উন্নয়ন হবে। টিআরডিএ’র আর মন্দিরের টাকা এক করে হরিবোল করবে, এটা মানব না। শ্মশান কমিটি আগে সেবাইতদের তত্ত্বাবধানে চলত। এখন শাসকদলের পার্টির লোক ঢুকে পড়েছে। শ্মশানে পূণ্যার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া কোটি কোটি টাকাও নয়ছয় করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে সাধুদের জন্য তৈরি রুম দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের মদতে তৃণমূল নেতারা এই দুর্নীতি করছে। 

    যদিও শ্মশান কমিটির সভাপতি প্রেমানন্দ মণ্ডল বলেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। উনি নিজেই সর্বগ্রাসী। ভুলভাল বকছেন। নির্বাচন আসছে। আবারও প্রার্থী হতে মিথ্যা অভিযোগ তুলে বাজার গরম করতে চাইছেন। উনি তারাপীঠের উন্নয়ন বিরোধী মানুষ হিসাবে পরিচিত।  এদিকে তারাময়বাবু বলেন, যিনি অভিযোগ করছেন তিনি মন্দিরের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। যদি আর্থিক নয়ছয় হয়ে থাকে তাহলে উনিও তো সমান দোষী। আর দুর্নীতি হয়ে থাকলে আইনের পথে হাঁটছেন না কেন? কুপন বাবদ পূণ্যার্থীর কাছ থেকে নেওয়া টাকায় মন্দিরের জীবিতকুণ্ডের কাজ চলছে। উনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বদনাম করার চেষ্টা করছে।  মন্দিরের প্রবীণ এক সেবাইত বলেন, ৫০০ টাকা কুপনের ১০০ টাকা মন্দির কমিটি পায়। ২০০ টাকা পালাদার। বাকি ২০০ টাকা সেবাইত পান। নিখিলবাবুর বছরে ৪০ দিন পালি। তিনি ওই টাকা দিয়ে কী করেছেন?

    এদিকে টিআরডিএর ভাইস চেয়ারম্যান তথা সেবাইত সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ১৫ বছর ধরে মন্দির কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়। আর ওই আত্মীয়কে সরিয়ে গঠিত উপদেষ্টা কমিটি এই এক বছরে  দু’কোটি টাকা আয় করেছে। তা দিয়েই জীবিতকুণ্ড সংস্কার হচ্ছে। টিআরডিএ মন্দিরের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে। আর মন্দিরের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করলে তো তোলার জন্য ওদের সই লাগবে। আর পার্টি ফান্ডে টাকা গেলে দু’হাজার সেবাইত ছেড়ে দেবেন? আসলে ওঁর ভাইপো এখন টাকা আত্মসাৎ করতে পারছে না। তাই মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)