বড়দিনে ইষ্টদেবতাকে ‘ছানার কেক’ নিবেদন করে আত্মবৎ সেবা ভক্তদের
বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: আজ বড়দিন। বড়দিন মানেই কেক। কেক খেয়ে প্রভু যিশুর জন্মদিন পালনে ধর্মের ভেদ থাকে না। বড়দিনে অনেকে গোপালের জন্য, রাধাকৃষ্ণের জন্য, কেউ আবার গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু কিংবা জগন্নাথদেবকে ছানার বা ক্ষীরের কেক নিবেদন করেন। বড়দিন উপলক্ষ্যে দোকানগুলিতে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন নামীদামি কোম্পানির কেক বিক্রি হচ্ছে। আর মঠ মন্দিরগুলিতে দেবতাদের জন্য নিরামিষ ছানার বা ক্ষীরের কেক তৈরি হচ্ছে। নবদ্বীপের অধিকাংশ মঠ ও মন্দিরে ভক্তরা বাড়ি থেকে নিরামিষ কেক তৈরি করে নিয়ে যান। মন্দিরে মন্দিরে ছানার বা ক্ষীরের কেক তৈরি হয়। পাশাপাশি নবদ্বীপের ছোটবড় বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে ছানার বা ক্ষীরের কেক বিক্রি হয়। বড়দিনে সেই কেক দিয়েই মঠ মন্দিরের বিগ্রহের পাশাপাশি গৃহদেবতাকেও ভোগ নিবেদন করেন অনেকেই।
স্থানীয় বাসিন্দা মিনতি আচার্য বলেন, এই বড়দিনে পরিবারের সকলেই কেক খান। আমরা যারা ঠাকুর দেবতা নিয়ে থাকি, তারা অনেকেই এই দিনে গোপালের উদ্যেশ্যে ছানার কেক নিবেদন করি। নবদ্বীপের উডবার্ন রোডের বাজারের মোড়ের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী কৃষ্ণেন্দু পোদ্দার বলেন, প্রতিবছরই বড় দিন উপলক্ষ্যে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি ছানার কেক তৈরি করতে হয়। তিন কেজি যদি ছানা হয়, তার মধ্যে ১০০ গ্রাম সুজি দিতে হয়। তা না হলে ওটা জালি হয় না। এরপর চিনি, কাজু, কিশমিশ দিতে হয়। তারপর চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা উনোনে অল্প আঁচে স্টিম করতে হয়। তারপর কেকটা ঠান্ডা করতে ট্রেতে রাখা হয়। শেষে কেকের উপর কাঠবাদাম সাজিয়ে খদ্দেরের কাছে বিক্রি করি। প্রতি বছরই এই নিরামিষ ছানার কেকের ভীষণ চাহিদা থাকে। বড়দিনের এক সপ্তাহ আগে থেকে বেশি পরিমাণে এই কেক তৈরি করতে হয়। প্রতি কেজি ছানার কেক চারশো টাকা দরে বিক্রি করি। এই সময়ে মঠ মন্দিরগুলিতে নিরামিষ কেকের ভীষণ চাহিদা থাকে। নবদ্বীপ বড়ালঘাটের একটি মিষ্টির দোকানের ম্যানেজার ভাস্কর ঘোষ বলেন, আমরা এই ছানার কেক প্রায় ৭০ কেজি তৈরি করেছি। মূলত ছানা দিয়ে এই কেক তৈরি করা হয়। এর সঙ্গে কিছু ড্রাই ফ্রুটস, মোরব্বা, কিশমিশ, কাজু, পেস্তা দেওয়া হয়। একটা পাঁচ কেজি সাইজের কেক তৈরি করতে প্রায় তিন ঘণ্টা হিট দিতে হয়। সাড়ে চারশো টাকা দরে বিক্রি করছি।
শ্রীশ্রীরাধামদনমোহন মন্দিরের সেবাইত প্রভুপাদ নিত্যগোপাল গোস্বামী বলেন, বড়দিনে আমাদের মন্দিরে কোনও বিশেষ সেবার ব্যবস্থা করা হয় না। তবে ইদানিং কিছু ভক্তবৃন্দ এইদিন ছানার কেক, বড়দিনের চিহ্নিত মিষ্টি ইত্যাদি মন্দিরে ভোগ দিতে নিয়ে আসে।নবদ্বীপ গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের মহাসচিব কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী মানুষকে কেন্দ্র করেই বড় দিনে কেকের প্রচলন আছে। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মে আত্মবৎ সেবার কথা বলা রয়েছে। অর্থাৎ নিজের ভাবনাটাকে, নিজের পছন্দটাকে দেবতার কাছে নিবেদন করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা থাকে ভক্তদের। এই ভাবেই বড়দিনে ভগবানকে মিষ্টান্ন কেক ভোগ দেন ভক্তরা। বৈষ্ণব ধর্মে কেকের প্রচলন নেই। কেক কথাটা ব্যবহার করা হয় না। এটাকে মিষ্টান্ন বলা হয়। ওড়িশায় ছানাপোড়া জগন্নাথদেবকে ভোগ নিবেদন করা হয়। এখানে তাকেই ছানার কেক বলা হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র