• ১০ টনের বেশি পাথরবাহী লরি ও ডাম্পারের অবাধ যাতায়াত সড়কে
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ১০ টনের বেশি মাল পরিবহণকারী গাড়ি যাতায়াত করবে না। বিভিন্ন প্রশাসনিক সভা থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা প্রশাসনের অধিকারিকদের একথা বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও পুরুলিয়া জেলার কাশীপুরের ক্ষেত্রে চিত্রের পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে অবাধে কাশীপুর ব্লকের সোনাথলি থেকে করঞ্জবেড়িয়া গ্রামীণ রাস্তায় ওভারলোডেড পাথর বোঝাই লরি, ডাম্পার যাতায়াত করছে। ফলে বর্তমানে রাস্তাটি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই গ্রামীণ রাস্তায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে একটি বড়োসড়ো দুর্ঘটনা ঘটে। পাথর বোঝাই একটি লরির ধাক্কায় এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা জখম হন ও তাঁর স্বামী মারা যান। কিন্তু প্রশাসন বিষয়টিতে আমল দেয়নি। তাই এবার বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আনতে কাশীপুর ব্লকের এক বাসিন্দা আইনজীবীর মাধ্যমে জেলাশাসককে আইনি নোটিশ পাঠান। পুরুলিয়ার জেলাশাসক কোন্থাম সুধীর বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে রাজ্যের প্রচেষ্টায় কাশীপুর ব্লকের সোনাথলি থেকে করঞ্জবেড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার একটি গ্রামীণ সড়ক তৈরি হয়েছিল। সেই গ্রামীণ সড়কের সঙ্গে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংযোগ হয়েছে। গ্রামীণ সড়কের সঙ্গে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক, কাশীপুর-বাঁকুড়া রাজ্য সড়ক ও রঘুনাথপুর - বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের যোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, আদ্রা ডিভিশনের ইন্দ্রবিল, সিরজাম স্টেশনে ট্রেন ধরতে গেলেও রাস্তাটি ব্যবহার করতে হয়।

    স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, দু’বছর আগে এক শিল্প সংস্থা কাশীপুর ব্লকের পাহাড়পুরে কালো পাথর খননের অনুমতি পায়। তারা পাথর উত্তোলন শুরু করে। অভিযোগ, পাথর উত্তোলনের কিছুদিন বাদে ওই গ্রামীণ সড়কের ধারে পাহাড়পুরে একটি বিশালাকার পাথর ভাঙার ক্র্যাশার বসানো হয়। বর্তমানে খাদান থেকে বড়, বড় কালো পাথর তুলে গাড়িতে করে ক্র্যাশারে নিয়ে আসা হয়। অন্যদিকে, ক্র্যাশারগুলি থেকে গিটি পাথর বড়,বড় লরি, ডাম্পারে করে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে শিল্প সংস্থার তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।

    এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামীণ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৬ চাকার বড়, বড় লরি, ডাম্পার ৫০ থেকে ৬০ টন ওজনের পাথর নিয়ে যাতায়াত করছে। এলাকার বাসিন্দা অমিতাভ ধীবর এই ব্যাপারে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কোনও রকম সদুত্তর না পাওয়ায় আইনজীবীর মাধ্যমে জেলাশাসককে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। গ্রামীণ সড়কে ১০ টনের বেশি ওজনের গাড়ি যাতায়াত সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ এখানে চার গুণ বেশি ওজনের পাথর বোঝাই গাড়ি দিনের পর দিন যাতায়াত করছে অবাধে। সদুত্তর না পেলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব।

    বিজেপির কাশীপুর ব্লকের সহ আহ্বায়ক প্রকাশ মাহাত বলেন, তৃণমূল সরকার সাধারণের কথা ভাবে না। তা না হলে এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অভিযোগের পরেও কীভাবে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ওভারলোডেড পাথর বোঝাই গাড়ি যাতায়াত করছে। নির্বাচনে মানুষ ঠিক এর জবাব দেবেন। 

    এদিকে, তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, বিষয়টি আমরা প্রশাসনের নজরে এনেছি। প্রশাসন পদক্ষেপ করবে বলে আশাবাদী।  -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)