মমতাজের কাঁথা স্টিচে মমতার ‘প্রকল্প-পাঁচালি’, পৌষমেলায় বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে
বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
পিনাকী ধোলে, বোলপুর: কাঁথা স্টিচের শাড়িতেও ‘উন্নয়ন পাঁচালি’! মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের ছবি সুচ-সুতোয় ফুটিয়ে তুলে পৌষমেলায় সবার নজর কাড়ছেন মমতাজ। কোনও শাড়িতে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’, কোনও শাড়িতে ‘কন্যাশ্রী’, ‘রূপশ্রী’। কোনও শাড়িতে আবার ‘পথশ্রী’ কিংবা ‘সবুজসাথী’। দেদার বিকোচ্ছেও সেইসব শাড়ি। দামও খুব একটা কম নয়। বাংলায় নারীর ক্ষমতায়ণে ‘দিদি’র ইতিবাচক ভূমিকাকে মর্যাদা দিতেই ‘প্রকল্প-পাঁচালি’ শাড়িতে ফুটিয়ে তুলছেন মমতাজ।
শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে চলছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। বুধবার ছিল দ্বিতীয় দিন। মেলা কমিটির দাবি, এবার পর্যটক ও শিল্পানুরাগীদের ভিড় অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। অন্যদিকে, হস্তশিল্পের বাণিজ্যে বারবারই রেকর্ড ভাঙছেন মমতাজ বেগমও। মেলায় ঢুকে বিদ্যুৎদপ্তরের স্টল ছাড়িয়ে কিছুটা গেলেই বীরভূম হস্তশিল্পের গ্যালারি। সেখানকার একটি স্টলে টাঙানো হরেক কাঁথাস্টিচের শাড়ি। মমতাজের শিল্পসম্ভার। সুচ-সুতোর নিপুণ কারুকাজে সবকিছুই যেন মায়াজাল। সামনে উপচে পড়া ভিড়। মমতাজের শিল্পসৃষ্টি দেখতেই উৎসুক লোকের সংখ্যাই বেশি। কেনাকাটাও করছেন অনেকেই। হাইপ্রোফাইল ক্রেতারা কিনছেন অত্যন্ত দামি দামি শাড়ি। এবার কাঁথাস্টিচের একটি শাড়ির দাম মমতাজ রেখেছেন এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা! তাতেই একজন কিনতে রাজি হয়েছেন বলে তাঁর দাবি। বায়না দিয়ে গিয়েছেন। শীঘ্রই নিয়ে যাবেন সেই মহামূল্যের শাড়ি।
বোলপুরেরই ভূমিকন্যা মমতাজ। জেলার হস্তশিল্পীদের কাছে চেনা নাম। একাধিক সরকারি পুরস্কার রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। রাজ্য সরকারের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছেন বিদেশেও। মমতাজের হাত ধরে কর্মসংস্থানের দিশা পেয়েছেন জেলার বহু মহিলা হস্তশিল্পী। গত বছর মমতাজের কাঁথা স্টিচে নবদুর্গার কারুকাজ করা একটি ওয়াল হ্যাঙ্গিং বিস্মিত করেছিল মেলায় আগত পর্যটকদের। শিল্পীর দাবি, সেটি বিক্রি হয়েছে ৩৩ লক্ষ টাকায়! দু’বছর চারমাস ধরে সুচ-সুতোয় ফুটিয়ে তুলেছিলেন নবদুর্গা। এবছরও তসরের শাড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাংলার আদিবাসী নৃত্যের দৃশ্য। তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় দেড় বছর। দাম রেখেছিলেন এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। মেলার প্রথম দিনেই সেটি নিতে আগ্রহ দেখিয়ে অগ্রিম দিয়ে গিয়েছেন ওই হাইপ্রোফাইল ক্রেতা। মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের ছবি ফোটানো কাঁথাস্টিচের শাড়িও বিক্রি হচ্ছে বেশ চড়া দামেই।
এবার পৌষমেলায় জয়জয়কার হস্তশিল্পের। দ্বিতীয় দিনে বিক্রিবাটায় দেখে বেজায় খুশি ভিন জেলার শিল্পীরা। হ্যান্ডলুম প্যাভিলিয়নের শিল্পী সুপ্রিয়া ঘোষ বলছিলেন, ‘কুর্তি, কাঁথাস্টিচ থেকে শুরু করে হ্যান্ডলুম—সবকিছুরই বাজার বেশ ভালো। আমাদের এখানে যতগুলি স্টল রয়েছে সবারই ব্যবসা ভালো হয়েছে।’ মেলায় নজর কাড়ছে দরিয়াপুর ও বাঁকুড়ার বিকনার ডোকরা শিল্পও। পিতল গলিয়ে তৈরি দেবদেবী ও মূর্তি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন বিদেশিরা। পাশাপাশি টেরাকোটা, বাঁশ ও বেতের তৈরি ঘর সাজানোর সৌখিন জিনিসের চাহিদাও এবছর তুঙ্গে। নিজস্ব চিত্র