ন্যাশনাল মেডিকেলে রাত ৮টার পর হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে নিয়ে গেলেই বিপদ, বাইপাস সার্জারি বন্ধ ৪ বছর, ইমার্জেন্সি ক্যাথল্যাব ১২ ঘণ্টা
বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বুকে ব্যথা হতে হবে ঘড়ি ধরে। কিন্তু কোনওভাবেই রাত ৮টার পর নয়। তা না-হলেই বিপদ। বিপদ বলে বিপদ! সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ইমার্জেন্সি ক্যাথল্যাব। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক বা অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনে আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীর দ্রুত আপৎকালীন চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন প্রাইমারি অ্যাঞ্জিয়োপ্ল্যাস্টি। সেজন্যই দরকার ক্যাথল্যাবের। কিন্তু ন্যাশনালের ইমার্জেন্সি ক্যাথল্যাব চলে ১২ ঘণ্টা। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা। তাই অনেকেই তীব্র শ্লেষের সঙ্গে বলেন, রাত ৮টার পর ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হলে এখানে গেলে বেঘোরে মরতে হবে!
এ তো গেল এখানকার হৃদরোগ বিভাগের অবস্থা। বর্তমানে এই অত্যন্ত জরুরি একটি বিভাগের আউটডোর ছ’দিন নয়, চলে সপ্তাহে তিনদিন—সোম, বুধ ও শুক্রবার। বিভাগে একজন করে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক। হাউসস্টাফ তিনজন। শেষোক্ত লোকবলের ঘোর অভাব। দরকার সাতজনের। কিন্তু হাউসস্টাফ আরও পাওয়া গেলে কি ২৪ ঘণ্টা ইমার্জেন্সি ক্যাথল্যাব চালানো সম্ভব? ন্যাশনাল সূত্রের খবর, তা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। সেজন্য দরকার কমপক্ষে আরও দু’জন করে নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ও ক্যাথল্যাব টেকনোলজিস্ট। এছাড়া চাই কমপক্ষে আরও এক থেকে দু’জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ।
রাতবিরেতে বুকে ব্যথা নিয়ে মরণাপন্ন মানুষ এখন হাসপাতালে এলে কী করা হয়? বিভাগীয় এক চিকিৎসক বলেন, সেক্ষেত্রে আমরা স্টেপটোকাইনাস জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে আপৎকালীন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করি। পরদিন সকালে আসতে বলি। তখন অ্যাঞ্জিয়োপ্ল্যাস্টি করে দেওয়া হয়। কিন্তু হ্যাঁ, জীবনসংকট হলে জরুরিভিত্তিতে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিয়োপ্ল্যাস্টি করা আশু প্রয়োজন। সেটা রাতে হয় না। সেরকম অবস্থা দেখলে আমরা রেফার করে দিই।
কলকাতার সেরা পাঁচ সরকারি মেডিকেলের একটি হওয়া সত্ত্বেও, ন্যাশনাল সবদিক থেকেই স্বাস্থ্যদপ্তরের দুয়োরানি। এবার দেখা যাক, এখানকার কার্ডিয়োথোরাসিক বা সিটিভিএস বিভাগের দিকে। ২০২২ সালে জুলাই মাসে সিটিভিএস বিভাগের সবেধন নীলমণি অধ্যাপক ডাঃ অংশুমান মণ্ডলকে পিজি হাসপাতালে বদলি করে দেওয়া হয়। তারপর বন্ধ করে দেওয়া হয় বিভাগটিই। ফলে স্থানীয় মানুষজন বা দক্ষিণ ২৪ পরগনার দূরদূরান্তের রোগীদের বাইপাস সার্জারি অথবা ভালভ প্রতিস্থাপন কোনওটাই হয় না এখানে প্রায় চারবছর।
এই বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফোন করা হয়েছিল ন্যাশনালের উপাধ্যক্ষ ও কার্যনিবাহী অধ্যক্ষ ডাঃ অর্ঘ্য মৈত্রকে। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।