• শহরকে সুস্থ রাখতে গাছ বসানোই নেশা উত্তর কলকাতার কল্পনা, তপন, গণেশ, কাজলদের
    বর্তমান | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুকান্ত বসু, কলকাতা: উত্তর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটপাতে রয়েছে নানা গাছ। শান বাঁধানো সেই গাছের গোড়া থেকে আবর্জনা সরিয়ে সেখানে মাটি ফেলে কল্পনা, তপন, গণেশ, কাজলরা নানা সবজির বীজ বসিয়ে চলেছে। আর সেই বীজ থেকে বেড়ে উঠেছে লাউ, কুমড়ো, পুঁইয়ের ডগা। কোথাও কোথাও হয়েছে পেঁপে ও লঙ্কা গাছ। তাতে ধরেছে ছোট ছোট লঙ্কা। বেড়ে ওঠা সেই লাউ‑কুমড়োর ডগা যাতে ঠিকভাবে লতিয়ে উঠতে পারে, তার জন্য সেগুলিকে কোথাও ছোট কঞ্চি, আবার কোথাও বড় দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও আবার সেই ডগা বড় গাছের ডালকে জড়িয়ে ধরে বেড়ে চলেছে। উত্তর কলকাতার ভূপেন বোস অ্যাভিনিউ, গিরিশ অ্যাভিনিউ, বাগবাজার খালপাড়, মদনমোহনতলা স্ট্রিটে গেলেই ওই সমস্ত গাছ‑গাছালি চোখে পড়বে। প্রতিদিন ওরাই নিয়ম করে ওই সমস্ত গাছের গোড়ায় জল ঢালে। আবার পালা করে পাহাড়া দেয়, যাতে গাছগুলি কেউ নষ্ট না করে ফেলে। শুধু তাই নয়, পথের ধারে কুকুর‑বিড়াল যাতে গাছ নষ্ট না করে, সে জন্যও রয়েছে ওদের সতর্ক দৃষ্টি।

    অভাবী ঘরের ওই সমস্ত ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, আঁকা, খেলাধুলা– সবই রাজপথে। পেটের তাগিদে ওদের বাবা‑মায়েরা কেউ বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। কেউ ভ্যান চালান। কেউ নানা ছোটখাট কাজের সঙ্গে যুক্ত। তাই গণেশ, কল্পনা, পম্পারা ফুটপাতেই বেড়ে ওঠে। সেখানে চলে ওদের প্রতিদিনকার রোজনামচা। লাজুক লাজুক মুখে ওরা জানায়, ফুটপাতে ছবি আঁকা ও পড়াশোনা দেখে কেউ কেউ ওদের হাতে মাঝেমধ্যে পাঁচ, দশ টাকা দিয়ে থাকেন কিছু খাওয়ায় জন্য। সেই টাকা বাঁচিয়ে ওরা বাগবাজারের খালপাড়ে গ্যালিফ স্ট্রিটের হাট থেকে বিভিন্ন সব্জির বীজ নিয়ে আসে। সেই বীজই বাসিয়ে থাকে বিভিন্ন গাছের গোড়ায়। কিশোরী ওই ছেলে‑মেয়েরা বলে, শহরকে ভালো রাখতেই এভাবে গাছ বসাই আমরা। 

    আর স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওদের এই উদ্যোগ সবুজ বাঁচাও আন্দোলনের একটা অঙ্গ বলে আমরা মনে করি। তাই এই কাজের প্রশংসা না করে পারি না। রবীন্দ্র সরণির বাসিন্দা অতনু সাতঁরা বলেন, ওদের হাতে কিছু গাছের বীজ তুলে দিয়েছি। যাতে ওদের ভালোবাসার উদ্যোগে কোনও ভাঁটা না পড়ে। ভূপেন বোস অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা বনানী পাল বলেন, ওদের এই উদ্যোগ দেখে ভালো লেগেছিল। কিছু পয়সা ওদের হাতে গুজে দিয়েছিলাম। ওদের সবুজ বাঁচাও আন্দোলনের এই লড়াই বেঁচে থাকুক, সেটাই চাইছেন এই সমস্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা।
  • Link to this news (বর্তমান)