• নানা যুক্তিতে 'ছাড়' চান মাইক্রো অবজ়ার্ভাররা, সমস্যায় EC
    এই সময় | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    কেউ নিজের বা পরিবারের কোনও সদস্যের ‘অসুস্থতা’র যুক্তি দিচ্ছেন, কেউ বা আবার জানিয়েছেন, তাঁর ‘স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা’। কেউ বা আবার বলছেন, বাড়ি–কর্মস্থল ছেড়ে এত দূরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়!

    বঙ্গে ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (সার) হিয়ারিং পর্বে যে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী বা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মী–অফিসারদের মাইক্রো অবজ়ার্ভারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, প্রথম দিনই তাঁদের অনেকে এ রকম নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে অব্যাহতি চাইলেন। হিয়ারিং শুরুর আগে বুধবার ছিল মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের প্রশিক্ষণ পর্ব। তার পরেই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দপ্তরের বাইরে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে লম্বা লাইন পড়ে যায় এ দিন সন্ধে। অনেকে আবার সিইও দপ্তরে ই–মেল করে মাইক্রো অবজ়ার্ভারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে অনুরোধ করেছেন। ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) বা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসাররা (এইআরও) হিয়ারিং চালানোর সময়ে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল মাইক্রো আবজ়ার্ভারদের। প্রথম দিনই সেই কাজ ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা সিইও অফিসের আধিকারিকদের একাংশের।

    কেন এই দায়িত্ব পালনে অনীহা?

    সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী হলেও তাঁদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা কাজ করছে। এ দিন নজরুল মঞ্চে সকাল থেকে দু’দফায় ৪৬০০ মাইক্রো অবজ়ার্ভারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সকালে প্রশিক্ষণ শেষ হতেই ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের বাসিন্দা একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বহরমপুর শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার মহম্মদ রাজা, দুর্গাপুরের একটি ব্যাঙ্কের রিজিওনাল অফিসের আধিকারিক উত্তরপ্রদেশের সৌরভ ওঝা, যাদবপুরের বাসিন্দা তথা বহরমপুরের একটি ব্যাঙ্কের আধিকারিক স্বর্ণদীপ পালরা ছুটে আসেন সিইও দপ্তরে। তাঁদের কাউকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর, কাউকে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা, কাউকে হুগলির আরামবাগে মাইক্রো অবজ়ার্ভার করে পাঠানো হয়েছে। প্রত্যেককেই ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিডিও অফিসে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। আবার হুগলির শ্রীরামপুরের বাসিন্দা, একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আরামবাগ বোলদিখুরি শাখার কর্মীকে ডিউটি দেওয়া হয়েছে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে। তাঁর কথায়, ‘বাড়িতে মা অসুস্থ, স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। এত দূরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়।’ এ ছাড়া বাকিদের অনেকে নিজের বা পরিবারের সদস্যের অসুস্থতা, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা–সহ নানা কারণ দেখিয়েছেন।

    কিন্তু কমিশন সূত্রের খবর, শুধু অসুস্থতা বা অন্য চাপ নয়, দায়িত্ব গ্রহণে অনীহার পিছনে রাজনৈতিক চাপও একটা বড় কারণ। কারণ, ‘সার’–এর প্রথম পর্বে বুথ লেভেল অফিসারদের (বিএলও) মধ্যে যেমন শাসক–বিরোধীদের রাজনৈতিক চাপের প্রসঙ্গ উঠেছিল, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। গত সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের বুথ লেভেল এজেন্টদের সভায় দাঁড়িয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এই মাইক্রো অবজ়ার্ভার নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমনকী, এই মাইক্রো অবজ়ার্ভাররা কোন দপ্তরে কাজ করেন, কোথায় থাকেন, তার ডিটেলসও জোগাড় করার নির্দেশ দেন এজেন্টদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মাইক্রো অবজ়ার্ভারদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘আমরা কেন্দ্রীয় সংস্থায় চাকরি করলেও তো এ রাজ্যেই থাকি। এরপরে অহেতুক রাজনৈতিক গোলমালের মধ্যে পড়তে হলে আমাদের ও পরিবারের সমস্যা বাড়বে।’

    এখন কমিশন কী করবে?

    সিইও দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘আবেদনগুলি খতিয়ে দেখা হবে। যুক্তিযুক্ত কি না, তা বিচার করা হবে। কারণ যুক্তিগ্রাহ্য হলে ছাড় দেওয়া হতে পারে।’ তা ছাড়া যাঁদের যেখানে ডিউটি পড়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট দিনে রিপোর্ট করতেই হবে। আপাতত কিছু মাইক্রো অবজ়ার্ভার বেঁকে বসলেও সমস্যা হবে না বলে মনে করছে কমিশন। কারণ, প্রয়োজনীয় সংখ্যার থেকে বেশি মাইক্রো অবজ়ার্ভারের তালিকা করা হয়েছে। তারপরেও সমস্যা হলে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • Link to this news (এই সময়)