অরূপ বসাক, মালবাজার: ডুয়ার্স, বাংলার বুকে যেন একটুকরো শান্তির ঠিকানা! বুনো গন্ধ, নাম না জানা পাখির ডাক, টলটলে জল- পর্যটকদের এক অমোঘ আকর্ষণ। শীতের মরশুমে জঙ্গলে পর্যটকদের গাড়ির শব্দ বাড়ে। বাড়ে ব্যবসাও। এবারও মরশুম এল, জমিয়ে শীতও পড়ল, কিন্তু পর্যটক কই! মনখারাপ ব্যবসায়ীদের। কয়েকদিন আগেই বন্যায় তছনছ হয়ে গিয়েছে অনেক কিছু। পুরনো ডুয়ার্সের দেখা মিলবে তো! আর সেই আশঙ্কাতেই এবার ডুয়ার্সমুখী হচ্ছেন না পর্যটকরা! অন্তত এমনটাই আশঙ্কা সেখানকার ব্যবসায়ীদের।
ডুয়ার্সের মূর্তির নিস্তব্ধ আরণ্যক সৌন্দর্য দিয়েই বরাবর পর্যটকদের আকর্ষণ করে! কাছেই গরুমারা ন্যাশনাল পার্ক, লাটাগুড়ি, টোটোপাড়া। মূর্তি নদী, জঙ্গল আর বন্যপ্রাণীর টানেই প্রতিবছর শীতের মরশুমে এখানে ভিড় জমান পর্যটকেরা। এই সময়টার দিকেই স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন তাকিয়ে থাকে।
কিন্তু ভরা ডিসেম্বরে একেবারে অন্য ছবি ডুয়ার্সে। বড়দিনে পর্যটকদের ভিড় নেই মূর্তি-সহ আশপাশের পর্যটন এলাকাগুলোয়। আর সেটাই চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে সেখানকার ব্যবসায়ীদের। তাঁদের কথায়, ডুয়ার্স-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা গত কয়েকদিন আগেই ভয়াবহ বন্যা কবলে পড়ে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় সেখানে। যা নিয়ে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
শুধু তাই নয়, বন্যার পর আগের মতো ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আদৌ ফিরে এসেছে কি না, তা নিয়েও একটা সংশয় পর্যটকদের মধ্যে আছে বলেও মত। এই দুই কারণেই এবার ডুয়ার্সে পর্যটক অনেকটাই কম বলেই দাবি। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী গোপাল রায় আক্ষেপের সুরে বলেন, “এখনও সেভাবে লোকজন আসছে না।” তবে শিগগিরই মূর্তির এই মনখারাপ কাটবে বলেই আশা গোপালবাবুর।
ডুয়ার্সে একটি হোম স্টে রয়েছে চিত্তরঞ্জন চৌধুরীর। এই সময় তাঁর হোম স্টে’তে ভিড় উপচে পড়ে। কিন্তু এবার একেবারেই অন্য ছবি বলে দাবি চিত্তরঞ্জনবাবুর। তাঁর কথায়, “প্রতিবছর এই সময় আমার হোম স্টেতে পা রাখার জায়গা থাকে না। আর এবার প্রায় সব ঘরই ফাঁকা। কেন পর্যটক আসছে না বুঝতে পারছি না। ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। এখন শুধু ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে থাকা।”
কলকাতা থেকে আসা পর্যটক সুমন দাসগুপ্ত, মধুরিমা সরকার জানান, মূর্তির নৈসর্গিক দৃশ্য তাঁকে মুগ্ধ করেছে। তবে পর্যটকদের যে কম তা নজরে এসেছে তাঁদের। সুমন দাসগুপ্ত বলেন, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন দরকার কি না সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এসআইআর সংক্রান্ত কাজ চলছে। যা নিয়ে মানুষজন ব্যস্ত। তার পরোক্ষ প্রভাবও পর্যটক কম হওয়ার একটি কারণ হতে পারে বলে মত। এই অবস্থায় সব মিলিয়ে, ডুয়ার্সের পর্যটন মানচিত্রে এই বছর মূর্তির ছবি বেশ কিছুটা ফিকে। তবে বছর শেষে পর্যটকের আগমনে ফের চেনা ছন্দে এই পর্যটন কেন্দ্র ফের ফিরবে বলেই মত।