আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিলের জলে নৌকা বাঁধা। মঞ্চ ভাসছে জলের বুকে। সুর তুলেছেন লোকশিল্পী, ‘সোনা বন্ধুরে, আমি তোমার নাম লইয়া কান্দি।’ এই সুরে যদি নস্টালজিয়ায় ডুবে যেতে ইচ্ছে করে, তবে বড়দিনে চলে আসতে হবে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাঁশদহ বিলে।
২৫ ডিসেম্বর গোটা বিশ্বজুড়ে বড়দিনের নানা উদযাপনের ভিড়ের মধ্যেই একেবারে অন্যরকম উৎসব শুরু হয় পূর্বস্থলী-১ নম্বর ব্লকের বাঁশদহ বিলে। খাল-বিল চুনোমাছ, পিঠেপুলি ও লোকসংস্কৃতিকে ঘিরে তিন দিনের এই উৎসব বর্তমানে বাংলায় বড়দিনের অন্যতম আকর্ষণ।
আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে এই অভিনব উৎসবের সূচনা করেন বর্তমান প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। ২০০০ সালে একেবারে নতুন ভাবনায় শুরু হওয়া এই উদ্যোগ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যজুড়ে পরিচিতি পেয়েছে।
আজ এই মেলা মানেই হারিয়ে যাওয়া গ্রামবাংলার পথে ফিরে যাওয়া, স্মৃতির অলিগলিতে পথ হারানো। উদ্যোক্তাদের মূল লক্ষ্য, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষা করা এবং বাংলার হারিয়ে যেতে বসা পুঁটি, খলসে, মৌরলা, ল্যাটা, কই, শোল-সহ নানা দেশি চুনোমাছকে বাঁচিয়ে তোলা।
পাশাপাশি শীতের মরসুমে হারিয়ে যেতে বসা পিঠেপুলির স্বাদ ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও রয়েছে এই উৎসবে। গত এক দশকে বাঁশদহ বিলের চেহারাই বদলে গেছে।
বিল সংস্কার, রাস্তা, আলো, পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা, সব মিলিয়ে এলাকাটি এখন পর্যটন মানচিত্রে উল্লেখযোগ্য। বিলের দুই পাড় এবং মাঝখানে নৌকার উপর তৈরি হয়েছে মঞ্চ।
ভোর থেকেই নৌকায় ভেসে ভেসে পল্লিগীতি, লোকগীতি, ভাটিয়ালি ও বাউল গান শোনান শিল্পীরা। বৃহস্পতিবার ২৫ বছরে পা দেওয়া এই উৎসবের সূচনা হয় একেবারে ব্যতিক্রমীভাবে।
অতিথিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিলের জলে ফোটা লাল শালুক। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা।
পাশাপাশি আমন্ত্রিত ছিলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। উৎসবে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি নানা স্টল, প্রাণী পালন সংক্রান্ত প্রদর্শনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
তিন দিন ধরে চলবে নৌকাবিহার, গ্রাম্য মেলার আমেজ ও লোকজ সংস্কৃতির নানা রূপ। অতিথিদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থাও থাকে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে।
এদিনের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, ধনেপাতা বাটা, বেগুনপোড়া, মৌরলা, খয়রা, শোল, কই, ল্যাটা, পুঁটি-বেলে সহ ১২ রকমের চুনোমাছের পদ, বিল থেকে ধরা কাতলা মাছের কালিয়া, চাটনি ও নলেন গুড়ের পায়েস।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিথিরা আসছেন এই উৎসবে। তিন দিন ধরে মেলা কমিটির ব্যস্ততা তুঙ্গে। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতি আর লোকজীবনের ছোঁয়ায় মন ভরিয়ে নিতে বাঁশদহ–চাঁদের বিলে এসে পড়লেই দিনটা যেন মাতাল হয়ে ওঠে।