নয়াদিল্লি: সোনার প্রতি অমোঘ আকর্ষণ সকলেরই। দুনিয়ার যে কোনও ভালোর সর্বোচ্চ মাপকাঠি সোনা। সামাজিক প্রতিপত্তির অমোঘ বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সঞ্চয়ের অস্ত্র হিসেবেও তুলনাহীন। তাই সোনার হরিণের মতো সোনার পিছু ধাওয়া করার প্রবণতা দুনিয়াজু্ড়েই। আর সেই কারণেই গত এক বছরে সোনার দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ। গত ক্রিসমাসের সময় ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ছিল ৭৭ হাজার ৪৫০ টাকা। এবার একলপ্তে সেই সোনায় বিকোচ্ছে ১ লক্ষ ৪০ হাজার ৬৪৫ টাকায়। তার পরেও গত এক বছরে ভারতে সোনার চাহিদা ছিল ৫০০ টনেরও বেশি।
সামনেই বিয়ের মরশুম। উৎসবের এই মরশুমে সোনার দাম বৃদ্ধি কি কোনও প্রভাব ফেলেছে? স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যনির্বাহী সভাপতি সমর দে বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম, যেভাবে দাম বাড়ছে তাতে আচমকা শোরুম বন্ধ করে দিতে হবে। কিন্তু তা হয়নি। কারণ, মধ্যবিত্তরা সোনাকে বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। এক শ্রেণির ক্রেতা ভারী গয়নার দিকেও ঝুঁকছেন, যা অত্যন্ত আশাপ্রদ।’ খুব শীঘ্রই সোনার দাম দু’লক্ষ টাকা স্পর্শ করবে বলে অনুমান সমরবাবুর।
ইতিহাস সাক্ষী। বিশ্ব যখনই টালমাটাল হয়েছে, তখনই সোনার দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। বস্তুত ১৯৭৯ সালের পর সোনার এত ভালো সময় কখনও আসেনি। ২০২৫ সালের আগে সেই বছরেই সোনার দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পায়। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্টের মসনদে জিমি কার্টার। পশ্চিম এশিয়া সংকটে জর্জরিত। ইরানে ইসলামি বিপ্লব। বাড়ছিল মুদ্রাস্ফীতি। নানাবিধ সংকটে ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ১২৬ শতাংশ বেড়েছিল। ভারতেও সেবার সোনার দাম বেড়েছিল অনেকটাই। ১৯৭৮ সালে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম ছিল ৬৮৫ টাকা। ১৯৭৯ সালে সেটাই গিয়ে দাঁড়ায় ৯৩৭ টাকায়। পরের বছর দাম আরও বাড়ে। ১৯৮০ সালে ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারাট সোনার দাম হয় ১ হাজার ৩৩০ টাকা। ১৯৭৯-৮০ সালে সোনার দাম বেড়েছিল ৩৬ শতাংশ। আর পরের বছর সেই বৃদ্ধির হার ৪১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারতেও যে একই হারে সোনার দাম বাড়েনি, তার কারণ তৎকালীন মোরারজি দেশাই সরকারের বাজার সংরক্ষণ নীতি।
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, গত শতকের সাতের দশকের শেষের সঙ্গে এখনকার বিশ্ব পরিস্থিতির মিল রয়েছে। দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে বসেই বিশ্বজুড়ে শুল্ক-সন্ত্রাস শুরু করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতের উপর সর্বাধিক ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন। তাই বিশ্ব বাজারে অস্থিরতা। আর তাই সোনার উপরেই ভরসা করছেন মানুষ। শুধু সোনা নয়, বিকল্প হিসেবে রুপোর দামও বেড়েছে। সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এমডি শুভঙ্কর সেন বলেন, ‘সোনার পাশাপাশি রুপো বেড়েছে ১৩০ শতাংশ। করোনা পরবর্তী সময়ে বাজারে অস্থিরতা এসেছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেও সোনা বুঝিয়ে দিয়েছে যে এটি আস্থাশীল লগ্নি। তবে সোনার পরিমাণ কমেছে। ব্যবসায়ীরাও কম ওজনের, কম ক্যারাটের সোনার গয়না তৈরি করেছেন, যাতে মার্কেট চালু থাকে। গয়নার দাম সবার আয়ত্তে থাকে।’