• বড়দিনে নবদ্বীপ, মায়াপুরে ভক্ত-পর্যটকের বিপুল ভিড়, ভাগীরথীর পাড়ে চলল জমিয়ে পিকনিক
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: বড়দিন উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার নবদ্বীপ ও মায়াপুরে ভক্ত-পর্যটকদের ঢল নামে। ইসকনের পাশাপাশি এদিন অনেকেই মায়াপুরের বিভিন্ন মন্দির সহ বল্লাল ঢিবি, চাঁদকাজির সমাধিক্ষেত্র দর্শনে যান। ভাগীরথী নদী পারাপারে পর্যটকদের প্রধান ভরসা ছিল নবদ্বীপ ও মায়াপুরের ফেরিঘাটের যন্ত্রচালিত নৌকা ও লঞ্চ। নবদ্বীপ ও মায়াপুরের দর্শনীয় স্থানগুলিতে দেখা গেল সেলফি তোলার হিড়িক। শীতের মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে ভাগীরথীর ধারে অনেকে পিকনিক করেন। গৌরাঙ্গ সেতুর পাশে নদীর ধারে পরিবার নিয়ে পিকনিকের আয়োজন ছিল দেখার মতো। নবদ্বীপ জল প্রকল্প ঘাট সংলগ্ন নদীর ধারে, প্রতাপনগর যুব আবাসের কাছেও পিকনিক চলেছে।

    এদিন নবদ্বীপের প্রাণকেন্দ্র পোড়ামা মন্দির, ভবতারিণী মন্দির, ভবতারণ শিবমন্দির, ধামেশ্বর গৌরাঙ্গ মন্দির, প্রাচীন মায়াপুর জন্মস্থান মন্দির, ৬০ফুট মহাপ্রভু মন্দির, রাধারানির মন্দির, বলদেব মন্দির, গোবিন্দ মন্দির সহ বিভিন্ন মন্দিরে পুণ্যার্থী ও পর্যটকদের ভিড় চোখে পড়ে। বছরের শেষ বৃহস্পতিবার গৌরাঙ্গ সেতুর নীচে ভাগীরথীর ধারে পিকনিক করতে সোদপুর থেকে সপরিবারে এসেছিলেন জয়ন্ত দাস। তিনি বলেন, আমরা ২৫জন এসেছি। এখানকার পরিবেশ খুবই মনোরম। নদীর ধারে বসে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সারলাম। বাঁকুড়া থেকে সপরিবারে আসা লক্ষ্মণ পাল বলেন, ৫৫জন বাস রিজার্ভ করে এসেছি। ভোরে মায়াপুর ঘুরে নবদ্বীপে মন্দির দর্শনে যাব। উত্তর ২৪পরগনার হাবরা অশোকনগর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলেন বিপ্লব নাগ, ননীগোপাল সরকাররা। তাঁরা বলেন, তারাপীঠ, ঝাড়খণ্ড, মুর্শিদাবাদের হাজারদুয়ারি হয়ে বুধবার রাতে নবদ্বীপে এসেছি। এদিন মায়াপুরে যাই।

    নবদ্বীপ প্রাচীন মায়াপুর গৌরাঙ্গ জন্মস্থান মন্দিরের অধ্যক্ষ অদ্বৈতদাস বাবাজি মহারাজ বলেন, মহাপ্রভুর দর্শনে এখানে আশানুরূপ ভক্ত সমাগম হচ্ছে। মায়াপুর ইসকন মন্দিরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, এদিন সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয়েছে। শীতের মরশুমে ভগবানের দর্শন করে মনের প্রশান্তির উদ্দেশ্যে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এখানে ছুটে আসেন।

    নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুর জন্মস্থান মন্দিরের সামনে রূপশ্রী অধিকারীর ঠাকুরের মূর্তি ও পুজোর সামগ্রীর দোকান রয়েছে। তিনি বলেন, বিক্রিবাটা ভালোই হচ্ছে। আশা করছি, পয়লা জানুয়ারিতে আরও লোক হবে। মায়াপুর শ্রীনাথপুরের বাসিন্দা টোটো চালক লোহারাম ঘোষ বলেন, উৎসবের মরশুমেও আমরা ন্যায্য ভাড়া নিচ্ছি। বামুনপুকুর চাঁদকাজির সমাধিক্ষেত্র, বল্লাল ঢিবি গেলে দূরত্ব বুঝে ভাড়া নিচ্ছি।

    নবদ্বীপ ফেরিঘাট জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সদস্য মুস্তাকিন মণ্ডল বলেন, ভিড় সামাল দিতে মায়াপুর ও নবদ্বীপের মধ্যে পাঁচটি লঞ্চ চলছে। একটি অতিরিক্ত লঞ্চ রাখা হয়েছে। নবদ্বীপ ও মায়াপুরের মধ্যে পাঁচটি নৌকা চালানো হচ্ছে। হুলোর ঘাট ও স্বরূপগঞ্জ রেলবাজার ঘাটের মধ্যে তিনটি নৌকা চলাচল করছে। নবদ্বীপ ও মায়াপুরের ফেরিঘাটের রাস্তায়, জেটিতে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল। ফেরিঘাটের কর্মীরাও নিরাপত্তার বিষয়টি নজরে রেখেছেন। নৌকা ও লঞ্চে ওঠার সময় ভিড় সামাল দিতে ব্যারিকেড করা হয়েছে। প্রতিটি নৌকায় পাঁচটি করে বোয়া রাখা হয়েছে।

    নবদ্বীপ থানার আইসি সমিত মণ্ডল বলেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরাও ফেরিঘাটগুলিতে নজরদারি চালাচ্ছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)