বেড়ো পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার এলাকাবাসী, রঘুনাথপুরে ডেপুটেশন
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে। যার ফলে এলাকার বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। সবুজ ধ্বংস হচ্ছে। একসময় পাহাড়ের জঙ্গলে নানা ধরনের বন্য জন্তুর বসবাস ছিল। তারা পাহাড় ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে পাহাড়ের বড় বড় পাথর বোঝাই লরি গ্রামীণ সড়কের উপর দিয়ে যাতায়াত করছে। অথচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাফ নির্দেশ রয়েছে, কোনও গ্রামীণ সড়কের উপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের গাড়ি চলাচল করবে না। রঘুনাথপুর-১ নম্বর ব্লকের এলাকার বেড়ো পাহাড় কাটা নিয়ে এলাকার মানুষ সোচ্চার হয়েছে। আরাবল্লী পর্বতের ইস্যুকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বেড়োর বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। রঘুনাথপুরের মহকুমা শাসকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ডেপুটেশন ও লিখিত অভিযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। রঘুনাথপুর মহকুমা শাসক বিবেক পঙ্কজ বলেন, একটি সংস্থা পাহাড় কাটার কাজ করছে। তা নিয়ে অনেকগুলি অভিযোগ এসেছে। আমরা সব খতিয়ে দেখছি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেড়োর চণ্ডীমেলা সংলগ্ন একটি বিশাল পাহাড় রয়েছে। এক সময় পাহাড়কে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। বিভিন্ন স্কুল কলেজের পড়ুয়ারা ট্রেকিং করতে আসত। এখন সব বন্ধ।
পশ্চিমবঙ্গ বাউরি সমাজ কল্যাণ সমিতির জেলা সভাপতি গৌরাঙ্গ বাউরি বলেন, এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। পাহাড়ের কোলে মন্দির রয়েছে। প্রচুর বনভূমি ধ্বংস হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরকে জানানো হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সংগঠনের তরফে শতাধিক মানুষকে নিয়ে মহকুমা শাসককে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে।
প্রকৃতি বাঁচাও ও আদিবাসী বাঁচাও মঞ্চের (দক্ষিণবঙ্গের) আহ্বায়ক রাজেন টুডু বলেন, আরাবল্লী পর্বতের মতো রঘুনাথপুর এলাকার একাধিক পাহাড় কেটে ফেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। পাহাড় কাটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জেলাশাসককে ডেপুটেশন দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমী আবির বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ২০০ কোটিরও বেশি বছরের প্রাচীন বেড়ো পাহাড়। শুধু পাথর নয়, এটা আমাদের জল, বায়ু, জীবন। আজ লোভী খনন, বেআইনি দখল আর নীরব প্রশাসনের জেরে বেড়ো থেকে আরাবল্লী ধ্বংসের মুখে। পাহাড় কাটা মানে ভবিষ্যৎ কেটে ফেলা। তাই এখনও চুপ থাকলে আগামী প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না। তাই বেড়ো পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হয়েছি।
রঘুনাথপুরের শিক্ষক কৌশিক সরকার বলেন, বেড়ো পাহাড় কাটাতে নিয়ম-শৃঙ্খলা মানা হচ্ছে না। এলাকা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রঘুনাথপুরের বিজেপি বিধায়ক বিবেকানন্দ বাউরি বলেন, রাজ্য সরকার দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। তাই প্রাকৃতিক সম্পদ পাহাড়, জঙ্গল কেটে টাকা উপার্জন করে সরকার চালানোর চেষ্টা করছে। এটা মেনে নেওয়া হবে না। বিধানসভায় সোচ্চার হব।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, যতদূর জানি নিয়ম মেনে পাহাড় কাটা হচ্ছে। তবে এলাকায় কোনও শিল্প গড়ে উঠলে সিএসআর ফান্ডে এলাকা উন্নয়নের কাজ করা প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ওই সংস্থা এলাকা উন্নয়নের কাজ কতটা করছে, তা প্রশাসনকে দেখতে বলব আমরা।