• খালবিল উৎসবের রজতজয়ন্তী বর্ষের সূচনা
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কালনা: বাউলের ভাটিয়ালি গান ও সানাইয়ের সুরের মুর্ছনায় অভ্যাগতদের বিলের জলের শাপলা ফুল ও খেজুর গুড়ের হাঁড়ি উপহার দিয়ে বৃহস্পতিবার পঁচিশতম খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি ও প্রাণি পালন উৎসবের সূচনা হল। উৎসব চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলাশাসক আয়েষা রানি এ, পুলিশ সুপার সায়ক দাস সহ বিকাশ পাজি, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, আলভিটো সহ এক ঝাঁক প্রাক্তন ফুটবল তারকা। বিকেলের দিকে উৎসব মঞ্চে হাজির হন পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার সহ বিশিষ্টরা। উৎসবের প্রথম দিনই সকাল থেকে মানুষের ভিড় উপচে পড়ে।

    দুই দশক আগে পূর্বস্থলী-১ ব্লকের শ্রীরামপুর ও সমুদ্রগড় পঞ্চায়েত এলাকায় মজে যাওয়া বাঁশদহ ও চাঁদের বিলের জলাশয় ছিল কচুরিপানায় ভরা। জলাশয় ও চুনো মাছকে বাঁচাতে এই উৎসব শুরু করেছিলেন এলাকার ভূমিপুত্র তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। তখনও তিনি বিধায়ক বা মন্ত্রী  হননি। মানুষের সহযোগিতায় মজে যাওয়া বিল সংস্কার করে ছোট মাছকে বাঁচিয়ে একদিকে যেমন মৎস্যজীবীদের রুজিরুটির ভাবনা ভাবেন। তেমনি বিলের জলকে ধরে রেখে চাষের কাজে লাগানোর চেষ্টাও শুরু করেন। জলাশয় ও চুনো মাছকে বাঁচাতে ২০০১ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে খাল-বিল, চুনো মাছ, পিঠেপুলি উৎসব শুরু হয়। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রী হন স্বপনবাবু। উৎসবও দিনকে দিন আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। স্বপনবাবুর এই উদ্যোগকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখে দেন একটি কবিতা, ‘খালবিল আর জলাশয়ে ভরা রূপসী কন্যা, ওদের সবাই যত্ন করো, ওরা আমাদের অনন্যা।’ প্রায় সত্তর একর এলাকা জুড়ে বিলের চারিদিকে ঢালাই রাস্তা তৈরি হয়। আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে চারিদিক। তৈরি হয়েছে গেস্ট হাউস। এখন বিলের জলে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। এদিন অতিথিদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজে ছিল ধনেপাতা বাটা, বেগুন পোড়া, চুনো মাছ, বড় মাছের নানা পদ সহ খেজুর গুড়ের পায়েস। 

    এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে বিলের শাপলা দিয়ে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রদীপ জ্বেলে উৎসবের সূচনা হয়। স্বপনবাবু অতিথিদের হাতে তুলে দেন খেজুর গুড়ের হাঁড়ি। এদিন খালবিল ও পরিবেশকে নিয়ে লেখা একটি ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। বিলের জলে ছাড়া হয় শিং, মাগুর খলসে, চিতল থেকে চুনো মাছ ও রুই-কাতলা মাছের চারা। সরকারি অর্থ ব্যয়ে বিলের জলে শুরু হয়েছে ঘেরাও পদ্ধতিতে মাছ চাষ। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন শিল্পপতি বিলের পাড়ে পর্যটকদের আকর্ষণে কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। স্বপনবাবু বলেন, বিলকে ঘিরে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম আজ তার অনেকটাই পূরণ হয়েছে। মাছচাষের উন্নয়ন, চাষের জলের জোগান সহ দেশি বিদেশি পাখির ঠিকানা হয়েছে বাঁশদহ ও চাঁদের বিল। বিলের পাড়ে সৌন্দর্যায়ন, কটেজ সহ পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য আরও কিছু করার ভাবনা রয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)