বড়দিনে দীঘায় রেকর্ড ভিড়, পিকনিক ও পুজো দেওয়ার ধুম, এই প্রথম উপরি পাওনা জগন্নাথ মন্দির
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শ্রীকান্ত পড়্যা, তমলুক: দীঘায় প্রতিবছর বড়দিন আসে, চলেও যায়। জনজোয়ার হয়। পিকনিক, হইহুল্লোড়ে মেতে ওঠেন পর্যটকরা। কিন্তু, এবছরই পূর্ব মেদিনীপুরের সৈকত শহরে পালিত হল অন্যরকম বড়দিন। এই প্রথম ভগবান যিশুর জন্ম দিবসে দীঘায় এসে পর্যটকরা দর্শন করলেন ভগবান শ্রীজগন্নাথ দেবকেও। এভাবে ধর্ম সমন্বয়ের সুযোগ পেয়ে আপ্লুত পর্যটকদের একটা বড় অংশ। ক’দিন আগে দীঘার পড়শি বিজেপি শাসিত ওড়িশায় সান্তা টুপি বিক্রেতাদের চরম হেনস্তা করার ঘটনা সামনে আসে। ওই বিক্রেতাদের ধর্ম জানতে চাওয়া হয়। তারপর শাসিয়ে বলা হয়, এখানে অন্য কোনও ধর্মের সামগ্রী বিক্রি করা চলবে না। অথচ, বৃহস্পতিবার বাংলার দীঘায় দেখা গেল অন্য ছবি। দেদার বিক্রি হয়েছে সান্তা টুপি সহ বড়দিনের নানা সামগ্রী। ওল্ডদীঘা থেকে নিউদীঘা—বিভিন্ন জায়গায় কচিকাঁচাদের চকোলেট উপহার দিয়েছেন সান্তাক্লজ। পিকনিক-হুল্লোড়ে মেতেছেন আগত পর্যটকরা। আবার প্রভু জগন্নাথ মন্দিরেও পুজো দেওয়ার লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকেই তাই বলাবলি করছিলেন—‘এটাই আমাদের শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দের বাংলা।’
যিশুর জন্মদিনে জগন্নাথ মন্দিরকেও বাহারি আলোক মালায় সাজিয়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন ‘ধর্ম যাঁর, যাঁর। উৎসব সবার’ প্রবক্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো গোটা মন্দির প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে তোলে জেলা প্রশাসন। সামনে রাস্তা একেবারে মায়াবী রঙিন। তাতে মন্দিরের আকর্ষণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মন্দির প্রাঙ্গণে ওড়িশি নৃত্য, কীর্তন সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও ব্যবস্থা ছিল। পর্যটকদের একাংশ পিকনিকে মেতেছেন। অন্য একটা অংশ মন্দিরের নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। দলবেঁধে প্রভু জগন্নাথের দর্শন সেরেছেন। দিয়েছেন পুজোও।
প্রতি বছরই ২৫ ডিসেম্বর দীঘায় প্রচুর সংখ্যক পর্যটক আসার প্রত্যাশা থাকেই। এবছর জগন্নাথ মন্দিরের সৌজন্যে সেই প্রত্যাশা আরও বেড়েছিল। সেইমতো জেলার নানাপ্রান্ত থেকে প্রচুর পুলিশ অফিসার, কর্মীকে দীঘায় মোতায়েন করা হয়। পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের স্পেশাল সেক্রেটারি তথা দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু মাজী, পুলিশ সুপার মিতুনকুমার দে, জগন্নাথ মন্দিরের সিইও বৈভব চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত থেকে সার্বিক পরিস্থিতি সামলেছেন। ফলে, এ বছর বড়দিন দু’টি রূপে দেখল দীঘাকে—একদিকে পর্যটনকেন্দ্র। অন্যদিকে, তীর্থকেন্দ্র।
এদিন, সকাল থেকেই ঝাউবনে পিকনিকের বিরাট আয়োজন। সাউন্ড বক্স বাজিয়ে নাচগান আর হইহুল্লোড়। দীঘা মোহনা, সি-হক ঘোলা, ব্লুভিউ ঘাট, হসপিটাল ঘাট, জগন্নাথ মন্দির ঘাটের পাশাপাশি ক্ষণিকাঘাট, মেরিনা ও পুলিশ হলিডে, ওশিয়ানাও উদয়পুর সর্বত্র জন সমাগম। বিভিন্ন ঘাটে ছিল কড়া নজরদারি। বিকেলের পর থেকে মন্দিরের সামনে বিরাট লাইন পড়ে। যাঁরা বড়দিন উপলক্ষ্যে সকাল থেকে দুপুর পিকনিকের আমেজে কাটিয়েছেন, তাঁরাও প্রভুর দর্শন পেতে লাইনে। সুষ্ঠুভাবে সবাই পুজো দিয়েছেন। সন্ধ্যা নামতেই এলইডি আলো এবং লেজার শো’য়ের কারণে মোহময়ী হয়ে ওঠে দীঘার সৈকত। তার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দেয় ভক্তিমূলক সঙ্গীতের সুর। মন্দির ট্রাস্টি কমিটির সদস্য রাধারমণ দাস বলেন, সকাল থেকেই ভক্তদের বিপুল ভিড় ছিল মন্দিরে। আমরা ওড়িশি নৃত্য, কীর্তন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলাম।’ মন্দিরে লাইন। নিজস্ব চিত্র