সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পিকনিকে শব্দদানবের দৌরাত্ম্য, ডিজের বিরুদ্ধে মাইকিং বনদপ্তরের
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, মানকর: কাঁকসার ঘন জঙ্গলের মাঝে অবস্থিত ইছাই ঘোষের দেউল। শীত পড়তেই প্রতিবছর বহু মানুষ পিকনিক করার জন্য এখানে আসেন। তেমনি বৃহস্পতিবার বড়দিন উপলক্ষ্যে জেলা ও ভিন জেলা থেকে বহু মানুষ পিকনিক করতে এসেছিলেন। পিকনিকে যাতে উচ্চস্বরে ডিজে বক্স না বাজে, প্লাস্টিক ব্যবহার না করা হয়, তা নজর রাখতে উপস্থিত ছিলেন বনদপ্তরের আধিকারিকরাও। স্থানীয়দের দাবি, কড়া নজরদারি না থাকলে বন্যপ্রাণীদের সমস্যা হবে।
গৌড়ের রাজা দেবপালের আমলে কাঁকসার জঙ্গল ঘেরা ত্রিষষ্টিগড়ের সামন্ত রাজা ছিলেন কর্ণ সেন। তাঁর আশ্রিত সোম ঘোষের পুত্র ইছাই ঘোষ। তিনি ত্রিষষ্টিগড়ের মধ্যেই আলাদা ঢেকুরগড় স্থাপন করেন এবং নিজেকে স্বাধীন রাজা হিসেবে ঘোষণা করেন। ইছাই ঘোষের এই অহঙ্কার মেনে নেননি কর্ণ সেন। শুরু হয় যুদ্ধ। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণ সেন হেরে যান। জয়ের নিশান হিসেবে ইছাই ঘোষ গড়ে তোলেন সুউচ্চ দেউল। বর্তমানে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে রয়েছে দেউলটি। তাদের মতে, মধ্যযুগের শেষের দিকে এটি গড়ে তোলা হয়েছিল। বর্তমানে দেউলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দেউল পার্ক।
এলাকার বাসিন্দা রাহুল ঘোষ, গৌতম চক্রবর্তীরা বলেন, প্রতি বছর বহু মানুষ দেউলে আসেন পিকনিক করতে। দেউল ছাড়াও এখানে শ্যামরূপা মন্দির, কালিকাপুর রাজবাড়ি, বনকাটি রথের মন্দির, জয়দেব কেন্দুলি সব একসঙ্গেই তাঁরা ঘুরে দেখতে পারেন। দেউলে হরিণ ও ময়ূরদের জন্য সংরক্ষিত এলাকাও ঘুরে দেখার মতো। তাঁরা জানান, ইতিহাসের দিক থেকে দেউল ও শ্যামরূপা মন্দিরের গুরুত্ব রয়েছে। রাজ্যের পর্যটন মানচিত্র নাম রয়েছে এই দু’টি জায়গার। এখন সারা বছরই পর্যটকরা আসছেন। তবে দুর্গাপুজো ও শীতকালে ভিড় বাড়ে। এলাকার অর্থনীতিও চাঙ্গা থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একসময় প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো না থাকায় বাইরের লোকেরা এখানে বিশেষ আসতেন না। কিন্তু পরে সেই পরিকাঠামো তৈরি হয়। এখন বনের ভিতরে নতুন রাস্তাও তৈরি হয়েছে। ফলে বহু মানুষ আসছেন। কিন্তু হরিণ ও ময়ূরদের সম্পর্কেও তাঁদের সচেতন থাকতে হবে। উচ্চস্বরে মাইক বাজালে এইসব প্রাণীদের অসুবিধা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বনদপ্তরের আধিকারিক ও কর্মীরা অভিযান চালাতে দেখা যায়। মাইক বাজানো ও প্লাস্টিক বর্জন নিয়ে তাঁরা পিকনিক করতে আসা মানুষদের সচেতন করেন। শিবপুরের বিট অফিসার অনুপ মণ্ডল বলেন, পিকনিকের মরশুমে বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে। বন্যপ্রাণকে রক্ষা করতে আমরা তৎপর।