সংবাদদাতা, বোলপুর: কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই বড়দিনের ছুটিতে বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে পৌষমেলায় ব্যাপক ভিড় দেখা গেল। সপরিবারে মেলায় এসে হইহুল্লোড়, কেনাকাটায় ব্যস্ত রইলেন সকলে। হোটেল না মেলায় অনেকে সকালে মেলা দেখে তারাপীঠের উদ্দেশে রওনা দেন। প্রতি বছর সারা রাজ্য থেকে এই মেলায় আসনে পটুয়ারা। এবারও ১০-১৫জন পটুয়া এসেছেন। মেলা প্রাঙ্গণে বাউল মঞ্চের পিছনে স্টলে ও মাটিতে বসে পটচিত্র বিক্রি করছেন। স্টলে বসেই পটে আঁকছেন তাঁরা। শিল্পীদের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে অনেকে তা কিনছেন। ডোকরার কাজও সমাদর পাচ্ছে। মেলায় আসা বিদেশিরাও এইসব শিল্পসামগ্রী কিনছেন।
ছুটির দিন হওয়ায় এদিন সকাল থেকেই মেলার মাঠে ভিড় বাড়তে থাকে। ঘর সাজানোর জিনিসপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্টলে বেশি ভিড় দেখা যায়। একসময় পটচিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় এবং পৌরাণিক কাহিনি ফুটে উঠত। পৌরাণিক চরিত্রগুলি কেমন তা পটচিত্রে আঁকা ছবি দেখেই ধারণা করা যেত। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পটচিত্রেরও বদল হয়েছে। আগে মনসা মঙ্গল, রাধাকৃষ্ণ, রামায়ণ, দুর্গার উপর পট বেশি দেখা যেত। সময়ের সঙ্গে পটচিত্রে বদল এসেছে।
পৌরাণিক কাহিনির পটের পাশাপাশি আদিবাসীদের নাচ, মাছের বিয়ের মতো পটের দেখা মিলেছে। এইসব পটও খুব জনপ্রিয়। মেলায় আসা পর্যটকদের অনুরোধে শিল্পীরা পটগান করছেন। মেলায় অনেক পটুয়া আবার শাড়ি, টি-শার্টে বিভিন্ন ধরনের ছবি আঁকছেন। কেটলি, লণ্ঠন সহ বিভিন্ন পাত্রের উপর আঁকা পটুয়াদের এইসব শিল্পকলা প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। মেলায় আসা বিদেশি পর্যটকদের কাছেও এইসব ছবি খুব আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে আসা তাজ চিত্রকর, মন্টু চিত্রকর বলেন, এখন পৌরাণিক কাহিনির উপর ভিত্তি করে আঁকা পটের চাহিদা কমেছে। সময়ের সঙ্গে পট আঁকার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। এখন মাছের বিয়ে, আদিবাসী নাচ এইসব পটের চাহিদা আছে। মেলায় বহু বিদেশি পর্যটক এইসব সামগ্রী কিনছেন। আমাদের দেশের সংস্কৃতি জানার চেষ্টা করছেন।
পৌষমেলায় ডোকরা শিল্পীরাও এসেছেন। বাঁকুড়া জেলার বিকনা ও পূর্ব বর্ধমানের দরিয়াপুরের ডোকরা শিল্পীরা পসরা সাজিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডের দুমকা থেকেও কয়েকজন শিল্পী এসেছেন। মেলার মাঠে লাইন করে বসে ও অনেকে স্টলে দেবদেবীর মূর্তি, হাতি-ঘোড়া পুজোর সরঞ্জাম, ঘর সাজানোর নানা উপকরণ বিক্রি করছেন। ডোকরা শিল্পেও নানা বদল এসেছে। হাতের বালা, কানের দুল, চাবির রিংয়ের মতো জিনিসের চাহিদা বেশি বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা।
বিকনার প্রশান্ত মাল, দরিয়াপুরের বাসন্তী কর্মকার জানান, মেলায় ডোকরার তৈরি জিনিস ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ঘরে সাজানোর জন্য বিদেশিরাও এইসব জিনিস কিনছেন। ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শিল্পী উজির জাদু জানান, ডোকরার তৈরি মেয়েদের অলঙ্কারের চাহিদা বেশি। বাংলার জনপ্রিয় এই শিল্পের বিদেশেও কদর রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা। মেলার শেষের দিকে বিক্রি আরও বাড়বে বলে আশা করছেন শিল্পীরা।