চরকি জুয়ার নামে নিঃস্ব করা হত যাত্রীদের, পাকড়াও চক্র
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বরানগর: ডানলপ ব্রিজের উপর প্রকাশ্যেই চলত জুয়ার আসর। মুহূর্তে টাকা দ্বিগুণ, তিনগুণের টোপ। শুধু কী তাই, আই-ফোন থেকে রকমারি সামগ্রীর টোপও দেওয়া হতো। এই টোপে পা দিলেই সর্বনাশ। তবে পা না দিয়ে উপায়ও নেই। কেউ যদি দূরে দাঁড়িয়ে উঁকিও মারেন, তাহলে তাঁকে কার্যত ধরে বেঁধে নিয়ে এসে বাধ্য করা হতো জুয়ার বোর্ডে চাকা ঘোরাতে। ওই বোর্ড অনেকটা চরকির মতো দেখতে। ওই বোর্ডে হাত দিলেই জোর করে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নিত চক্রের লোকজন। বৃহস্পতিবার দুপুরে এক অফিস কর্মীকে মারধরের পর জোর করে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটায় তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়। খবর পেয়ে বরানগর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তারা জুয়ার বোর্ড বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আক্রান্ত যুবককে টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর ডানলপ বাসস্ট্যান্ড। দক্ষিণেশ্বরগামী লেনে ওই বাসস্ট্যান্ডে টেবিল পেতেই চলে জুয়ার কারবার। বাসযাত্রীরাই ছিল জুয়ার কারবারিদের টার্গেট। তারা নিজেরাই টাকা লাগিয়ে নানা সামগ্রী জিতে নিত। বাসযাত্রীরা দাঁড়িয়ে তা দেখলে তাঁদের জোর করে খেলতে বাধ্য করা হতো এবং তাঁদের টাকা কেড়ে নিত তারা।
এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ওই স্ট্যান্ডে বাসের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন হাওড়ার আমতার বাসিন্দা সুভাষ বসু। তিনি কামারহাটি এলাকার একটি বেসরকারি অফিসে চাকরি করেন। অভিযোগ, জুয়ার ঠেক থেকে পাঁচ-ছ’জন এসে তাঁকে খেলতে বাধ্য করে এবং তাঁর থেকে চার হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। টাকা ফেরত চাইলে তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তিনি অফিসের মালিককে বিষয়টি জানালে অফিসের কর্মীরা দলবল নিয়ে এসে অভিযুক্তদের পাকড়াও করেন। খবর দেওয়া হয় বরানগর থানায়। পুলিশ এসে বেশ কয়েকজন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ওই চরকি জুয়ার বোর্ড থানায় নিয়ে যায়।
আক্রান্ত যুবক সুভাষ বসু বলেন, আমি বাড়ি যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলাম। জুয়ার ঠেকের লোকেরা এসে টাকা ছিনিয়ে নেয়। স্থানীয় বাসিন্দা স্বরূপ শর্মা বলেন, এখানে প্রকাশ্যে জুয়ার ঠেক চলে। বাসের যাত্রীদের জুয়া খেলতে বাধ্য করা হচ্ছে। কেউ অস্বীকার করলে তাঁদের হেনস্তার মুখে পড়তে হচ্ছে। আমরা চাই, জুয়ার কারবারের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।