• বাংলা বলায় পিটিয়ে খুন ওড়িশায়
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর ও কলকাতা: গালিগালাজ, হুমকি, মারধর, গ্রেফতারি, বাংলাদেশে পুশব্যাক— ভিনরাজ্যে বাংলায় কথা বলার জন্য ইতিমধ্যে এসব শাস্তি পেতে হয়েছে বাঙালিকে। তাতেও থামছে না প্রতিহিংসা। দিন কয়েক আগে বিজেপিশাসিত রাজ্য অসমের কার্বি আংলঙে দুই বাঙালিকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এবার শুধুমাত্র বাংলায় কথা বলার জন্য আরেক ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য ওড়িশায় পিটিয়ে মারা হল মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা এক পরিযায়ী শ্রমিককে। জখম আরও দু’জন। আধার কার্ড দেখিয়েও তাঁরা রেহাই পাননি বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে সম্বলপুরের শান্তিনগরে। মৃত পরিযায়ী শ্রমিকের নাম জুয়েল রানা। বয়স ২১। তিনি সূতি-১ ব্লকের বাসিন্দা। জখমদের নাম আরিক শেখ ও পলাশ শেখ। বাড়ি মুর্শিদাবাদেই। এবারই প্রথম নয়। ওড়িশায় এর আগে বাঙালিদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হেনস্তা করা হয় বাঙালি ব্যবসায়ীদেরও। গোটা ঘটনায় গর্জে উঠেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। জুয়েলের দেহ বাড়িতে নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

    পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের দাবি, দিন পাঁচেক আগে ওড়িশার সম্বলপুরে কাজ করতে গিয়েছিলেন জুয়েল সহ এলাকার আরও কয়েকজন যুবক। রাজমিস্ত্রির সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতেন তাঁরা। বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিট নাগাদ স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে যান  জুয়েল। সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন আরিক ও পলাশ। তিনজনে বাংলায় কথা বলছিলেন। সেসময় বিজেপি আশ্রিত পাঁচজন দুষ্কৃতী তাঁদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদের বাসিন্দাদের ‘বাংলাদেশি’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। দেখাতে বলা হয় পরিচয়পত্রও। জুয়েলরা আধার কার্ড দেখান। তা সত্ত্বেও তিনজনকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে শুরু হয় গণপিটুনি। কোনওমতে সেখান থেকে পালাতে সমর্থন হন আরিক ও পলাশ। কিন্তু পালাতে পারেনি জুয়েল। তাঁকে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে জুয়েলকে উদ্ধার করে। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। সেই খবর জানানো হয় মুর্শিদাবাদের বাড়িতে। যদিও বাংলায় কথা বলার জন্য গণপিটুনির অভিযোগ মানেনি ওড়িশা পুলিশ। তাদের দাবি, বিড়ি চাওয়া নিয়ে বচসার জেরেই এই ঘটনা। অভিযুক্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    ঘটনার কথা জানতে পেরেই উদ্যোগী হয় নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে জুয়েলের দেহ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেন রাজ্য পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওড়িশা থেকে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা দেয় জুয়েল রানার মরদেহবাহী গাড়ি। মৃতের পরিবারের দাবি, অভিযুক্তদের কঠোরতম শাস্তি চাই। মুর্শিদাবাদের যে ঠিকাদার জুয়েলকে কাজে পাঠিয়েছিলেন, তাঁর অভিযোগ, ‘ওড়িশায় বিজেপির লোকজন বাংলার বাসিন্দাদের উপর অত্যাচার করেছে। জখমদেরও ফিরিয়ে এনে এখানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’  

    ঘটনার সবিস্তারে খবর নিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘বাঁচতে চাই, বিজেপি তাই— সম্প্রতি এই স্লোগান তুলেছে গেরুয়া শিবির। এটা তো সরাসরি হুমকি। তারপরই বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী যুবককে খুন!’ রাজ্যের মন্ত্রী আখরুজ্জামান বলেন, ‘ডাবল ইঞ্জিন রাজ্য ওড়িশায় বাঙালি মুসলিমদের উপর অত্যাচার করা হচ্ছে।’ পালটা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, ‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত করবে। কিন্তু বাংলার শ্রমিকদের ওড়িশা যেতে হচ্ছে কেন? তার মানে বিজেপির রাজ্যে উন্নয়ন হচ্ছে।’
  • Link to this news (বর্তমান)