• সন্ধ্যা নামতেই জনস্রোত পার্ক স্ট্রিটে
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আলিপুর পশুশালায় শিম্পাঞ্জির দাপাদাপি। পার্ক স্ট্রিটে আইসক্রিম আর কফি। ময়দানে বাদামভাজা। ভিক্টোরিয়ায় ভেলপুরি। ইকো পার্কে সেলফি তোলার হিড়িক। বো বারাকে ভিন্ডালু আর লুকিয়ে ওয়াইনে চুমুক। শীতে গা এলিয়ে কলকাতা বড়দিনের আনন্দে মজে রইল দিনরাত।

    সোনারপুর থেকে ট্রেনে এসে মা-বাবার সঙ্গে বালিগঞ্জ স্টেশনে নেমেছিল পঞ্চম শ্রেণির স্বর্ণাভ। তার আগে ইন্টারনেট ঘেঁটে ও জেনে ফেলেছে কোন বাস পার্ক স্ট্রিট যাবে। কাছাকাছি কোন মেট্রো স্টেশন আছে। দেখতে দেখতে এল ‘এস ৯’ সরকারি বাস। মা-বাবার হাত ধরে ঝাঁপিয়ে পড়ল স্বর্ণাভ। বিড়লা তারামণ্ডল পেরনোর পর উত্তেজনায় চিত্কার, ‘নামো, নামো।’ বড়দিনের শহর কলকাতা এমন উচ্ছ্বল, প্রাণবন্ত থাকল সকাল থেকে রাত। বিকেল গড়াতেই পার্ক স্ট্রিটে মহোত্সব। ভিড় আছড়ে পড়ল। বিকেলের পর যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল পার্ক স্ট্রিটে। পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখা গিয়েছে রাস্তায় শুধুই মানুষের মাথা। তা কালো নয়, লাল-নীল-সবুজ টুপিতে ছয়লাপ রাস্তা। টুপিতে জ্বলছে আলো। সেই অনেক আলো চলেফিরে বেরিয়েছে রাত পর্যন্ত।

    বড়দিনে ভিক্টোরিয়া, পার্ক স্ট্রিটের নামও গিয়েছিল বদলে। বাস কন্ডাক্টররা হেঁকেছেন ‘আলো জ্বলা পার্ক স্ট্রিট যাবে। পরীওয়ালা ভিক্টোরিয়া যাবে। চার্চ যাবে।’ এক কন্ডাক্টর বলেন, ‘লোকে বাসে ওঠার সময় জিজ্ঞেস করছে আলো জ্বলা পার্ক স্ট্রিটে যাবে তো?’ সেই আলো জ্বলা পার্ক স্ট্রিটে সূর্যের আলো থাকতেই জ্বলে গিয়েছিল বিদ্যুতের আলো। ফুটপাত তখনই ভিড়ে ঠাসা। সন্ধ্যা হতেই তা একডালিয়ার অষ্টমীর ভিড়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। দুপুর থেকে চিড়িয়াখানায় তিলধারণের জায়গা নেই। বাঘের খাঁচার সামনে থিকথিক করছে কচিকাঁচারা। তবে নিরাশ করেছে ডোরাকাটা রয়্যাল বেঙ্গল। সে বেশিরভাগ সময় গুহার ভিতর বিশ্রাম নিয়েছে এদিন। তবে শিম্পাঞ্জির লাফালাফি, জিরাফের এনক্লোজারে ঘোরাফেরা, হাতি, সিংহ দেখে আমোদে আটখানা মানুষ। দুপুরে চিড়িয়াখানার অন্দরে কষা মাংস-রুটি, লুচি, নতুন আলুর দমের গন্ধ। পশুশালা কর্তৃপক্ষ সূত্রে খবর, চলতি মরশুমের এখনও পর্যন্ত রেকর্ড ভিড় হয়েছে চিড়িয়াখানায়। সেখান থেকে বেরিয়ে অনেকেই চলে গেলেন ভিক্টোরিয়া। ভিড় উপচে পড়েছিল শহরপ্রান্তেও। বড়দিনের অন্যতম ‘শো-স্টপার’ এদিন ইকো পার্ক। ভিড়ের নিরিখে শহরকে সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে ইকো পার্ক। অনেকেই বড়দিনের ভিড় এড়াতে ‘হাউজ পার্টি’ কিংবা শহরের প্রান্তে পিকনিকে চলে গিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, শহর ঘোরা তো রইলই। এখনও বছরের শেষদিন তো বাকি। কলকাতা পুলিশ বলছে, ভিড় বাড়লেও চুরি-ছিনতাই-অভব্য আচরণের তেমন কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। সবমিলিয়ে কড়া শীতে বড়দিনের সকাল থেকে রাত চেটেপুটে আনন্দ উপভোগ করেছে মানুষ।                                                  ছবি: সায়ন চক্রবর্তী
  • Link to this news (বর্তমান)