• স্টেশনে চায়ের ভাঁড়ে মাদক-নখ! সংজ্ঞা হারালে সর্বস্ব লুট রেলযাত্রীর, লুটেরাদের নয়া কৌশল, প্রশিক্ষণ মালদহে
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: হাতের আঙুলে বড়ো বড়ো নখ। তাতেই লুকিয়ে লুটের চাবিকাঠি। রেল স্টেশনে বা ট্রেনে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল, সোনাদানা লুটের নেপথ্যে নখের ভূমিকা কী? লুটেরাদের নয়া কৌশল ধরা পড়েছে মাসখানেক আগে। সন্দেহের বশে বিভিন্ন রেল স্টেশন থেকে কয়েকজনকে ধরেছিল রেল পুলিশ। তাদের জেরা করেই নখের গল্প সামনে আসে।

    ওই নখের মধ্যেই লুকোনো অবস্থায় থাকে নিষিদ্ধ মাদক। কোনও যাত্রীর সঙ্গে প্ল্যাটফর্মে আলাপ জমানোর পর অনাহূত ব্যক্তি নিজেই চা বা কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তারপর গল্পের ফাঁকে নিজেই আগবাড়িয়ে সেই গরম চায়ের ভাঁড় হাতে নিয়ে এগিয়ে দেয় যাত্রীকে। কেরামতি এই জায়গাতেই। ওই ভাঁড় বা কাপ হাতবদলের আগেই কৌশলে তারা আঙুল ডুবিয়ে দেয় চা বা কফির মধ্যে। এরপর সেই চা বা কফি খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সংজ্ঞা হারান ওই যাত্রী। এই সুযোগে যাত্রীর সর্বস্ব লুট করে নিয়ে পালায় অপরাধীরা। খাবারে মাদক মিশিয়ে লুটের চক্রান্ত আজ অতীত। এখন নখেই ‘বিষ’। মাদকের ছোট্ট ছোট্ট পুরিয়া লুকোনো থাকে নখের মধ্যেই। চক্রের এই নতুন ‘মোডাস অপারেন্ডি’ চিন্তায় ফেলেছে রেল পুলিশকে। তা আটকানোই এখন চ্যালেঞ্জ অফিসারদের। 

    আগে খাবার বা পানীয়র সঙ্গে মাদক মিশিয়ে খাওয়ানোর পর যাত্রী বেহুঁশ হয়ে পড়লে তাঁর জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিত দুষ্কৃতীরা। এ বিষয়ে রেল পুলিশের তরফে যাত্রীদের বারেবারে সতর্ক করা হয়েছিল। ধরপাকড়ও হয়েছে কোনও কোনও সময়ে। কেউ খাবার দিলে যাত্রীরা অনেকেই এখন সেই খাবার বা পানীয় ‘রিফিউজ’ করেন। তাই তারা এখন লুটের কৌশলে বদল এনেছে। রেল পুলিশ সূত্রে খবর, সন্দেহের বশে যাদের পাকড়াও করা হয়েছিল, জেরায় তারা জানিয়েছে, এরজন্য আলাদা করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। যার পাঠশালা মালদহে। সেখানে শেখানো হয়, কীভাবে দশ আঙুলের নখে মাদক লুকিয়ে রাখতে হয়। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

    এই ধরনের অপরাধে যুক্তরা দশ আঙুলের নখেই লুকিয়ে রাখে নিষিদ্ধ মাদক। তারপর কথার ফাঁকে চায়ের ভাঁড়ে বা কাপে আঙুল ডুবিয়ে মিশিয়ে দেয় মাদকের গুঁড়ো। যাত্রী জানতেই পারেন না, তাঁর কত বড়ো ক্ষতি হতে চলেছে। ওই চা বা কফি খাওয়ার পর ওই যাত্রী অচৈতন্য হয়ে পড়লে সর্বস্ব লুট করছে অভিযুক্তরা। হুঁশ ফেরার পর যাত্রী টের পাচ্ছেন, তাঁর সব খোয়া গিয়েছে। মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, হাওড়া, শিয়ালদহ সহ বিভিন্ন স্টেশনে এই চক্রের লোকজন ছড়িয়ে রয়েছে। সেকারণে রেল পুলিশের সতর্কবার্তা, অপরিচিত কারও সঙ্গে চা বা কফি খেতে গেলে নিজেই দোকানির থেকে ভাঁড় বা কাপ নিন। অন্য কাউকে ধরতে দেবেন না। নাহলে বড়সড় বিপদের মুখে পড়তে পারেন। 
  • Link to this news (বর্তমান)