পরীক্ষার হলে এক ছাত্রীর হিজাব তুলে চেকিংয়ের অভিযোগে তোলপাড় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের দিন এই মর্মে প্রতিবাদে সরব হন ছাত্র-ছাত্রীরা। যাদবপুরের ক্যাম্পাসের মধ্যে কোনওরকম 'ইসলামোফোবিয়া' চলবে না বলে বিক্ষোভ দেখান তারা। গত ২৪ ডিসেম্বর কনভোকেশন ডে-তে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রীর হাতে এই ধরনের বার্তা দেওয়া প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। সেই থেকেই শুরু বিতর্ক।
বিক্ষোভকারী ছাত্র-ছাত্রীদের অভিযোগ, গত সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্নাতক পর্বের তৃতীয় বর্ষের ইংরেজি পরীক্ষা চলাকালীন ঘটনাটি ঘটে। মাঝ পথে এক ছাত্রীর পরীক্ষা থামানো হয়। ইনভিজিলেটর তাঁকে হিজাব সরাতে বলে বলে অভিযোগ।
ইন্ডিয়া টুডে-কে ওই পরীক্ষার্থী বলেন, 'ইনভিজিলেটর আমায় হিজাব সরাতে বলেন আচমকাই। আমায় দেখাতে বলেন গলায় ওয়্যারলেস হেডফোন ঝুলছে কি না। এই প্রশ্নে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। আমি নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ করে এসে ইনভিজিলেটর আমায় এমন বললেন বলে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে অনেক সময়েই ধর্মীয় কারণে পক্ষপাতিত্বের শিকার হতে হয়েছে। তবে আমার বিশ্ববিদ্যলয়ে আমি সর্বদাই নিরাপদ মনে করি নিজেকে। হঠাৎ করেই সেই নিরাপদ অনুভব করার বিষয়টি এক ঝটকায় সেদিন ভেঙে গিয়েছিল।' এখানেই শেষ নয়, পরীক্ষার্থীর অভিযোগ, ইনভিজিলেটর তাঁকে এ-ও প্রশ্ন করেন, ব্যক্তিগত পছন্দ থেকেই তিনি হিজাব পরেন কি না। গ্রীষ্মকালেও তিনি হিজাব পড়েন না শুধু শীতকালেই? এ প্রশ্নও করা হয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনায় সেদিন পরীক্ষার হলে অনেকেই প্রতিবাদ করেছিলেন। এরপরই ওই ছাত্রীকে আলাদা ঘরে নিয়ে গিয়ে একজন মহিলা ইনভিজিলেটরের উপস্থিতিতে হিজাহ সরিয়ে চেকিং করা হয়। উপস্থিত ছিলেন তাঁর ডিপার্টমেন্টাল হেডও। যদিও কোনও নিষেধ থাকা বস্তু মেলেনি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, এই ঘটনার পর ইতিমধ্যেই ইংরেজি বিভাগে একটি বৈঠক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ এই স্পর্শকাতর বিষয়টিকে পরীক্ষার হলে সিকিউরিটি প্রোটোকলের দরুন একটি ভুল বোঝাবুঝি বলেই উল্লেখ করেছেন। কোনও ভাবেই কারও ভাবাবেগে আঘাত করার চেষ্টা বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয় বলেই দাবি তাঁদের। অনেক সময়েই পরীক্ষার হলে ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে এসে ধরা পড়েন পরীক্ষার্থীদের। সে কারণেই চেকিং চলছে। এটিও তেমনই একটি ঘটনা।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ছাত্র প্রতিনিধিরা। এই মর্মে কর্তৃপক্ষ এবং ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হতে চলেছে খুব শীঘ্রই।