ভিড় উপচে পড়ল পার্কস্ট্রিটে, ফুটপাথের স্টলে বই মাড়িয়ে এগিয়ে চলল জনতা, VIRAL VIDEO
আজ তক | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শহরে বড়দিন উদযাপন মানেই শহরবাসীর পার্কস্ট্রিট দর্শন। আলোর মালায় সেজে ওঠা এই এককালীন অ্যাঙ্গলো পাড়ায় হাঁটতে দূর-দূরান্ত, এমনকী শহরের বাইরে থেকেও মানুষের ভিড় উপচে পড়ে। প্রতি বছরের মতো এবারের বড়দিনেও এক চিত্র সেখানে। তবে নিরাপত্তার চাদরে মোড়া পার্কস্ট্রিটে তাল কাটল বৃহস্পতি রাতে। একটা সময়ে মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ে ঠেলাঠেলি-হমড়ি খেয়ে পড়ার মতো অবস্থা হয়। তবে বরাতজোরে এড়ানো গিয়েছে পদপিষ্ট পরিস্থিতি। চরম বিশৃঙ্খলারও সৃষ্টি হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও ভিড় সামাল দিতে যেন হিমশিন খাচ্ছিলেন তারা। এমনকী রাস্তায় থাকা স্টলের বই মাড়িয়েও চলে যেতে দেখা যায় জনতাকে। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে নেটপাড়ায়।
ভাইরাল ভিডিও
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে পার্কস্ট্রিটের একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কোথাও দেখা গিয়েছে ঠেলাঠেলি তো কোথাও আবার রেস্তোরাঁর বাইরে লম্বা, শেষ দেখা না যাওয়া লাইনের। তবে একটি ভিডিও ঘিরে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে নেটপাড়ায়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, পার্কস্ট্রিটের ফুটপাথে বইয়ের ডালি সাজিয়ে বসেছেন দোকানি। আর সেই বইয়ের উপর পা দিয়ে মাড়িয়েই এগিয়ে চলেছে জনতা। তিল ধারণের জায়গা নেই পার্কস্ট্রিটের ফুটপাথগুলিতে। ফলত এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই ফুটপাথে সাজানো বইগুলোকে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছেন। নেটিজেনরা অনেকেই পার্কস্ট্রিটগামী মানুষের এহেন আচরণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন। যদিও এই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি bangla.aajtak.in.
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে কাউকে বলতে শোনা যায়, 'বইয়ের প্রতি মানুষের সমস্ত সম্মান আজ ধুলিস্যাৎ।' আবার কেউ বলেন, 'এতবার পার্কস্ট্রিটে এসেছি, এমন অবস্থা কখনও দেখিনি।' বই দোকানি পদপিষ্ট হয়ে যাবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় ওই ভিডিওতে।
জনসুনামি!
পার্কস্ট্রিটে ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য প্রতি বছরই রাস্তার দু'ধারে পুলিশের ব্যারিকেড করা থাকে। মাঝ রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকে। সাধারণ মানুষকেও রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে দেওয়া হয় না। ব্যারিকেড ঘেরা ফুটপাথের উপর দিয়েই পার্কস্ট্রিট মোড় থেকে অ্যালেন পার্কের দিকে হেঁটে যায় জনতা। এবারও তেমনই বন্দোবস্ত ছিল লালবাজারের। এমনকী, সন্ধ্যায় খোদ কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা পরিদর্শন করেন পার্কস্ট্রিট। সমস্ত বন্দোবস্ত সত্ত্বেও কোনও কোনও সময়ে পার্কস্ট্রিটে ধরা পড়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থার। অতিরিক্ত ভিড়ে কোথাও ঠেলাঠেলি, কোথাও হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়া কিংবা ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হওয়ার মতোও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
কেন প্রতিবছর পার্কস্ট্রিট যায় মানুষ?
ব্রিটিশ আমলের কলকাতায় পার্কস্ট্রিট ‘সাহেব পাড়া’ হিসেবে পরিচিত ছিল। ইউরোপীয় অফিসার, মিশনারি ও ধনী ইংরেজ পরিবারদের বসবাস ছিল এই এলাকায়। সেই সূত্রেই পার্কস্ট্রিট ঘিরে চার্চ, ক্লাব, স্কুল ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তালিকায় ছিল সেন্ট টমাস চার্চ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, ক্যালকাটা ক্লাব। এই এলাকাই হয়ে ওঠে কলকাতায় খ্রিস্টধর্ম ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্র। বড়দিন উদযাপন করতে এই এলাকা সুন্দর করে সাজাতেন ব্রিটিশরা। সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। এখনও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে শুরু করে মল্লিক বাজার পর্যন্ত গোটা রাস্তা জুড়ে ক্রিসমাস থিমে। এটি এখন ভারতের অন্যতম বড় ক্রিসমাস কার্নিভাল। বড়দিনের সপ্তাহজুড়ে পার্কস্ট্রিট সেন্টার অফ অ্যাট্র্যাকশন। অ্যালেন পার্কে শোনা যায় লাইভ মিউজিক, ব্যান্ডের পারফরম্যান্স, ক্রিসমাস ক্যারোল। সঙ্গে রয়েছে নামী-দামি রেস্তোরাঁও। ফলে বড়দিন মানেই মানুষের ওয়ান স্টপ ডেস্টিনেশন হল পার্কস্ট্রিট। আর সে কারণেই জনসুনামি দেখা যায় এই রাস্তায়।