• শিক্ষার আলো জ্বলল বিএড কলেজের সৌজন্যে, বুধুরাম বনবস্তি থেকে এই প্রথমবার মাধ্যমিকে সুমিলা, প্রেরণা রাষ্ট্রপতি
    বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: চোলাইয়ের নেশা ছাড়াতে গ্রাম ‘দত্তক’। শিক্ষার আলো জ্বলল বিএড কলেজের সৌজন্যে। গোরুমারা জঙ্গল লাগোয়া রামশাইয়ের বুধুরাম বনবস্তি থেকে এই প্রথম বোর্ডের পরীক্ষায় আদিবাসী ছাত্রী। স্থানীয় ভবানী হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিকে বসতে চলেছে গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিকের মেয়ে সুমিলা ওরাওঁ। দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু তার আইকন। সুমিলাকে দেখেই গ্রামে অশিক্ষার আলো ঘোচাতে তল্লাটের অন্য ছেলেমেয়েরাও পা বাড়িয়েছে স্কুলের পথে। 

    কয়েক বছর আগেও যে গ্রামে প্রাথমিকের পড়ুয়া মিলত না, সেখানে এখন অনেকেই হাইস্কুলে পড়ে। বিএড কলেজের ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্যোগে আট থেকে আশির জন্য বুধুরাম বনবস্তিতে গড়ে উঠেছে মুক্ত বিদ্যালয়। শুধু বুধুরাম নয়, আদিবাসী অধ্যুষিত রামশাইয়ের ভেলুয়ারডাবরি গ্রামেও অবৈতনিক স্কুল গড়ে শিক্ষার আলো জ্বালানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বিএড কলেজের ছাত্র-শিক্ষকরা। জলপাইগুড়ি সদরের মহকুমা শাসক তমোজিৎ চক্রবর্তী বলেন, প্রশাসন ও শিক্ষাদপ্তর তো চেষ্টার কোনও খামতি রাখছে না। এরসঙ্গে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার প্রসারে বিএড কলেজ কর্তৃপক্ষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে, তাকে সত্যিই সাধুবাদ দিতে হয়। জলপাইগুড়ি জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্যামলচন্দ্র রায় বলেন, রাজ্য সরকার সমস্ত এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। শিক্ষা অনুরাগীরা সেই কাজে শামিল হলে আরও ভালো হয়। ওই বিএড কলেজ সেটাই করছে। ময়নাগুড়ির মনোরঞ্জন সাহা মেমোরিয়াল বিএড কলেজের সভাপতি মনোজকুমার সাহা বলেন, বুধুরাম বনবস্তিকে আমরা ১৫ বছরের জন্য দত্তক নিয়েছি। শুধু পড়াশোনা নয়, সেখানকার বাসিন্দাদের স্বনির্ভর করতে আমরা পশুপালনের খামার করে দিচ্ছি। বুধুরামে মুক্ত বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা রাধামণি রায় বলেন, একসময় যে বনবস্তিতে বইয়ের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের সেভাবে কোনও সম্পর্ক ছিল না, সেখানে এখন বেশকিছু ছেলেমেয়ে হাইস্কুলে পড়ছে। এবারই প্রথম এখান থেকে একজন মাধ্যমিকও দিচ্ছে। সুমিলার বাবা মাঞ্চাল ওরাওঁ কেরলে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়েছেন। চার বোনের বড় সুমিলার কথায়, পড়াশোনা শিখে অনেক বড় হতে চাই। দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু আমার আইকন। একসময় সকাল হলেই বুধুরামে বসত চোলাইয়ের ঠেক। নেশায় চুর হয়ে বাড়ি ফিরত পুরুষরা। সংসারের জোয়াল টানতে চা বাগানে কাজে যেতেন মহিলারা। বইয়ের সঙ্গে শিশুদের সম্পর্ক বলতে কিছুই ছিল না। ধরে বেঁধে কাউকে স্কুলে পাঠানো হলেও প্রাথমিকের গণ্ডি পেরতেই ছেদ পড়ত পড়াশোনায়। সেই গ্রামে শিক্ষার আলো জ্বলতেই কমে গিয়েছে মদের ঠেক।
  • Link to this news (বর্তমান)