• বাংলাদেশে দুই হিন্দু হত্যার তীব্র নিন্দা করল মোদী সরকার, শাস্তির দাবি বিদেশ মন্ত্রকের
    আজ তক | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • একের পর এক সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ। বাংলাদেশে দুই হিন্দু যুবককে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় কড়া ভাষায় নিন্দা জানাল ভারত। শুক্রবার বিদেশমন্ত্রকের তরফে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, পড়শি দেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে যে ‘অবিরাম শত্রুতা’ চলছে, তা উদ্বেগজনক। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে বলেও বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। এই আবহেই শুক্রবার বাংলাদেশ হাই কমিশনে ডেপুটেশন জমা দিতে পথে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর দাবি, বাংলাদেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক স্তরে চাপ বাড়ানো হোক।

    এদিন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, 'বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অবিরাম শত্রুতা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাম্প্রতিক ঘটনায় এক হিন্দু যুবকের নৃশংস হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অপরাধীদের অবশ্যই বিচারব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে।' একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের তরফে যে ‘ভুয়ো ব্যাখ্যা’ বা ‘ফলস ন্যারেটিভ’ দেওয়া হচ্ছে, তা ভারত বরাবরই খারিজ করে এসেছে বলেও জানায় বিদেশমন্ত্রক।

    ভারতের দাবি, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা প্রায় ২,৯০০টির কাছাকাছি। শুধু একটি বা দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, ধারাবাহিক হিংসার অভিযোগ উঠছে বলে নয়াদিল্লির বক্তব্য। চলতি মাসে বাংলাদেশের দু’টি পৃথক জেলায় হিন্দু যুবককে পিটিয়ে মারার ঘটনার পর নতুন করে উদ্বেগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

    রাজবাড়ি জেলায় বুধবার গভীর রাতে খুন হন ৩০ বছরের অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। পুলিশের দাবি, সম্রাটের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ছিল, এমনকি খুনের মামলাও। স্থানীয়দের অভিযোগ, তিনি এবং তাঁর সঙ্গীরা চাঁদা তুলতে এসেছিলেন। ‘চোর-চোর’ বলে চিৎকার ওঠার পরই উত্তেজিত জনতা তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। যদিও এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘মব জাস্টিস’-এর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

    এর আগেই ময়মনসিংহ জেলায় আরও এক হিন্দু যুবক, ২৭ বছরের পোশাক কারখানার কর্মী দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে খুন করা হয়। অভিযোগ, ধর্ম অবমাননার ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে মারধর করা হয়। শুধু তাই নয়, দেহ গাছে বেঁধে আগুন লাগানো হয় বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মহলেও।

    বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার, মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন, এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে জানায়। ‘নতুন বাংলাদেশে’ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ বা জনতার হাতে বিচার চলতে পারে না বলে বিবৃতি দেওয়া হয়। দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়। তবু প্রশ্ন উঠছে, আশ্বাসের পরেও কেন বারবার একই ছবি ফিরে আসছে?

    বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও কম নয়। রাজনৈতিক কর্মী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দফতরে হামলার ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তার মধ্যেই সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হামলার অভিযোগে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে নয়াদিল্লির।

    ভারতের সক্রিয়তায় বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে আলোচনা বাড়বে বলে মত পর্যবেক্ষকদের। প্রশ্ন উঠছে, শুধুই কি বিবৃতি আর আশ্বাসে হিংসা থামবে? নাকি বাস্তব পদক্ষেপও নেওয়া হবে? সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।
  • Link to this news (আজ তক)