পুরকর্মীদের জন্য বিশেষ ‘হেলথ স্কিম’-এর দাবি, উদ্যোগী হলেন ফিরহাদ
বর্তমান | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: দলমত নির্বিশেষে এই দাবি বহুকালের। কলকাতা পুরসভার কর্মীরাও ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম বা তার সমতুল্য কোনও স্বাস্থ্যবিমার সুবিধা পাক। কিন্তু এখনও পুরকর্মীদের হেলথ স্কিমের সেই ‘স্বপ্ন’ অধরাই থেকে গিয়েছে। এবার দাবিপূরণে উদ্যোগী হয়েছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত ফাইল নবান্নে পাঠানো হবে। যাতে ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ স্কিম বা তার সমতুল্য কোনও স্বাস্থ্যবিমা পুরসভার কর্মচারীদের জন্য চালু করা যায়।পুরসভা সূত্রে খবর, বর্তমানে পুরকর্মীরা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে মেডিকেল অ্যালাউন্স পান। তার সঙ্গে একটি স্বল্পমূল্যের স্বাস্থ্য-বিমাও রয়েছে। যা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলে চালু হয়েছিল। তাতে মাত্র এক লক্ষ টাকা মেলে। শুধু ক্যান্সার সহ কিছু ক্রিটিক্যাল চিকিৎসার জন্য দেড় লক্ষ টাকা ধরা আছে। কিন্তু, তা ‘ক্যাশলেস’ নয়, ‘রিএমবার্স’ করা হয়। অর্থাৎ খরচ করার পর টাকা মেলে। কিন্তু এই টাকা পুর-কোষাগার থেকেই যায়। রাজ্য কোনও খরচ দেয় না। এক পুরকর্তার কথায়, রাজ্য সরকারি কর্মীদের ক্ষেত্রে পুরোটাই আলাদা। যাবতীয় নানা সুবিধা রয়েছে। তাঁদেরও প্রতি মাসে ৫০০ টাকা মেডিকেল অ্যালাউন্স রয়েছে। কিন্তু যাঁরা সেই টাকা ‘ফরগো’ করেন অর্থাৎ নেন না, তাঁরা রাজ্য সরকারি স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ পান। তাতে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্যাশলেসের সুবিধা রয়েছে। যেহেতু রাজ্যের সমস্ত নিয়ম এখানে মানা হয়, তাই পুরকর্মীদের জন্যও সেই স্বাস্থ্যবিমা চালুর দাবি বহুকালের।জানা গিয়েছে, মেয়র বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন, যাতে কলকাতা পুরসভার কর্মচারীদের জন্য কোনও বিশেষ স্বাস্থ্যবিমা চালু করা যায়। তাই নবান্নে প্রস্তাব পাঠানো হবে। প্রস্তাব হচ্ছে, বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পাঁচ লক্ষ টাকার ক্যাশলেস ও পাঁচ লক্ষ টাকার রিএমবার্সমেন্ট পাবেন। অর্থাৎ মোট ১০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা। যদিও এক কর্তা বলেন, আলাদা করে কোনও টাকার অঙ্ক সম্ভবত বলা হচ্ছে না। ফাইল পাঠানো হবে যাতে সরকারি হেলথ স্কিম বা তেমন কোনও আলাদা স্বাস্থ্যবিমার সুযোগ পুরকর্মীরাও পান। এবং সেই তাতে যেন রাজ্যের তরফেও টাকা ‘শেয়ার’ করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা বিমা সংস্থার সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয়েছে। বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে কোনও ভালো প্রস্তাব এলে সেটাও বিবেচনা করা হবে।এই প্রসঙ্গে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ইঞ্জিনিয়ারস অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মানস সিনহা বলেন, এটা পুরসভার সমস্ত কর্মী ইউনিয়নের মিটিংয়ে গৃহীত প্রস্তাব। শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আমল থেকেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু কিছু হয়নি। পুরসভার কর্মীরা রাস্তার কাজ করেন। জঞ্জাল সাফ করতে হয়। তাই তাঁদের দ্রুত স্বাস্থ্যহানি হওয়ায় সম্ভাবনা বেশি। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য এমন স্বাস্থ্যবিমা খুব জরুরি। কর্মীরা উপকৃত হবেন। পুরকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারি কর্মীদের মতো বহু সুযোগ সুবিধাই মেলে না। সর্বশেষ পে কমিশন অনুসারে সরকারি কর্মীদের ‘কেরিয়ার অ্যাডভান্সমেন্ট স্কিম’ রয়েছে। যাকে আমরা ৮-১৬-২৫ বলে থাকি। তাতে চাকরি জীবনের আট বছর পর্যন্ত একটাও প্রোমোশন না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মীর পে-স্কেল পরবর্তী পর্যায়ে বাড়িয়ে দেওয়ার কথা। ঠিক সেভাবে ১৬ বছরে ন্যূনতম দু’টি কিংবা ২৫ বছরের কর্মজীবনে অন্তত তিনটি প্রমোশন না বলে একইভাবে পে-স্কেল বাড়ে। কিন্তু পুরকর্মচারী সেই সুবিধাও পান না। হেলথ স্কিম চালু হোক।