• এসআইআর-এর শুনানি শুরুর আগের দিন আতঙ্কে মৃত!
    আজকাল | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য জুড়ে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়ার (এসআইআর) শুনানি শুরু হওয়ার ঠিক আগে ভোটার তালিকায় নাম না থাকার আতঙ্কে  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদের এক বাসিন্দার। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে  বৃহস্পতিবার রাতে  হরিহরপাড়া থানার অন্তর্গত রায়পুর এলাকায়। মৃত ব্যক্তির নাম নিমাই মাল (৪৫)। ওই ব্যক্তি জিতারপুর এলাকায় একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। 

    প্রসঙ্গত এসআইআর প্রক্রিয়া চলাকালীন ভোটার তালিকায় নাম না থাকতে পারে এই আশঙ্কায় মুর্শিদাবাদ জেলার কমপক্ষে চারজন ব্যক্তির আতঙ্ক এবং আত্মহত্যার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে মৃতদের পরিবারের অভিযোগ। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রায়পুর গ্রামের বাসিন্দা নিমাই মালের ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ওঠায় গ্রামের বিএলও  মুরতাজুল শেখ তাঁকে এনুমারেশন ফর্ম দিয়েছিলেন। সূত্রের খবর ,এনুমারেশন ফর্মে নিমাইবাবু নিজের বাবার জায়গায় শ্যামলাল রায়ের নাম লিখেছিলেন। বাবার নামের পদবীর সঙ্গে নিমাইবাবুর পদবীর মিল না হওয়ায়  বিএলও তাঁর বিশেষ 'অ্যাপে' দুজনের সম্পর্ক 'লিঙ্ক' করতে পারেননি। এর কারণে বিএলও নিমাই মালকে উপযুক্ত নথি নিয়ে শুনানিতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

    গত কয়েকদিন আগে বিএলও-র কাছ থেকে এই নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই নিমাইবাবু নিজের বাড়িতে বাবার সঙ্গে তাঁর পদবীর মিল খুঁজে বার করার জন্য বিভিন্ন নথি খুঁজছিলেন।  কিন্তু নিমাইবাবুর নিজের কোনও জমির দলিল বা অন্য কোনও নথি না থাকায় তিনি মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। 

    মৃত নিমাই মালের স্ত্রী পরিবালা মাল বলেন,"গতকাল  আমি এবং আমার স্বামী দু'জনে মিলে পরিবারের পুরনো সমস্ত নথি খুঁজে দেখছিলাম। ভোটার তালিকায় নাম না থাকলে দেশ ছাড়তে হবে এমন আতঙ্কে সেই সময় আমার স্বামী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।  তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি।" আরজান শেখ নামে মৃতের এক প্রতিবেশী বলেন," নিমাইবাবুর বাবার পদবীর সঙ্গে তাঁর পদবীর মিল না থাকায় বিএলও  উপযুক্ত নথি জমা করতে বলেছিলেন। কিন্তু নিমাইবাবুর কাছে এমন কোনও নথি ছিল না যার সাহায্যে তিনি প্রমাণ করতে পারেন  তাঁর বাবার পদবী আগের ভোটার তালিকায় ভুল লেখা হয়েছিল। এই কারণে ওই ব্যক্তি আতঙ্কে ছিলেন। নতুন ভোটার তালিকায় নাম থাকবে না এই আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিমাইবাবু মারা গিয়েছেন। "

    বিএলও  মুরতাজুল শেখ বলেন," ২০০২-এর ভোটার তালিকায় নিমাইবাবুর নাম না থাকলেও তাঁর বাবার নাম ছিল। বাবা এবং ছেলের পদবীর 'মিস ম্যাচ' হওয়ার কারণে বিএলও অ্যাপসে আমাকে সেগুলো ঠিক করে পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমি ফোন করে ওই ব্যক্তিকে উপযুক্ত নথি জমা দিতে বলেছিলাম।" রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নাজমুল হক বলেন,"সম্ভবত কোনও ভুলের কারণে ২০০২- এর ভোটার তালিকায় মৃত ব্যক্তির বাবার পদবী রায় ছিল।  নিমাইবাবুর পরিবারের প্রকৃত পদবী মাল। ওই ব্যক্তি রায় এবং মাল পদবীর মধ্যে কোন 'লিঙ্ক' খুঁজে দিতে পারছিলেন না। সেই আতঙ্ক থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।"
  • Link to this news (আজকাল)