• SIR-সংক্রান্ত বিশেষ আপডেট! শনি থেকেই শুনানি, ডাক পেয়েছেন? পেলে কী করবেন? লাস্ট মিনিট সাজেশন...
    ২৪ ঘন্টা | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • রক্তিমা দাস:  আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে SIR প্রক্রিয়ার শুনানি। তার জন্য রাজ্য (SIR in Bengal) জুড়ে ৩ হাজার ২৩৪ টি হিয়ারিং কেন্দ্র করা হয়েছে। শুনানিতে (SIR Hearing) ডাকা হয়েছে মূলত এনিউমারেশন ফর্মে কোনও ম্যাপিং না দেখানো কমবেশি প্রায় ৩২ লাখ ভোটারকে। ভোটার তালিকায় স্বচ্ছতা ফেরাতে শুরু হচ্ছে SIR শুনানি। কড়া নজরদারিতে রাজ্য। 

    রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে ‘ভুয়ো’ ও ‘সন্দেহজনক’ নাম বাদ দিয়ে একটি নির্ভুল তালিকা তৈরির লক্ষ্যে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) ২০২৬-এর শুনানি বা হিয়ারিং প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ ঘিরে রাজ্যজুড়ে কড়া নিরাপত্তার চাদর বিছানো হয়েছে। ভোটার তালিকার এই বিশেষ শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ায় এবার প্রযুক্তি ও প্রশাসনিক নজরদারিতে কোনো ফাঁক রাখতে চাইছে না কমিশন।

    হিয়ারিং কেন্দ্রের প্রস্তুতি ও কড়া নজরদারি

    শুনানি প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে রাজ্যজুড়ে মোট ৩ হাজার ২৩৪টি হিয়ারিং কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে নিয়োগ করা হয়েছে পাঁচ জনের একটি শক্তিশালী তত্ত্বাবধায়ক দল।

    কারা থাকবেন: প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবেন বুথ লেভেল অফিসার (BLO), অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকট্রোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (AERO), ইলেকট্রোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ERO) এবং মাইক্রো অবজারভার। কিছু বিশেষ কেন্দ্রে বিএলও সুপারভাইজারও উপস্থিত থাকবেন।

    মাইক্রো অবজারভারের ভূমিকা: এই প্রক্রিয়ায় মাইক্রো অবজারভাররা কার্যত ‘হিউম্যান সিসিটিভি’ হিসেবে কাজ করবেন। শুনানির প্রতিটি মুহূর্তের ওপর তাঁরা কড়া নজর রাখবেন যাতে কোনো অনিয়ম না হয়। ভোটার ছাড়া শুনানি কেন্দ্রে পাঁচ জনের তত্ত্বাবধানে হবে এই হিয়ারিং। মোট ১৩ টি নথি প্রামাণ্য নথি হিসেবে গৃহীত হবে। এর মধ্যে রয়েছে CAA সার্টিফিকেট। হিয়ারিংয়ে ফলস নথি দিলে, ধরা পড়লে কমপক্ষে ১ বছরের জেল ও জরিমানা হবে। 

    লক্ষ্য ৩২ লাখ ভোটার: শীর্ষে মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা

    এনিউমারেশন ফর্মে কোনো সঠিক ম্যাপিং বা যোগসূত্র দেখাতে পারেননি—এমন প্রায় ৩২ লাখ ভোটারকে এই শুনানিতে ডাকা হয়েছে।

    মুর্শিদাবাদ: দাদু-দিদা বা ঠাকুরদা-ঠাকুমার নাম ব্যবহার করে ‘প্রোজেনি ম্যাপিং’ বা বংশলতিকা দেখানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গরমিল পাওয়া গেছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। এখানে ৪ লাখ ৭ হাজার ৬৫ জন ভোটার সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন, যা রাজ্যে সর্বোচ্চ।

    দক্ষিণ ২৪ পরগনা: তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এই জেলা। ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্র সংবলিত এই জেলায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৯১০ জন ভোটারের তথ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে কমিশন।

    উত্তর ২৪ পরগনা: এখানেও ২ লাখের বেশি ভোটার রয়েছেন প্রোজেনি ম্যাপিংয়ের সন্দেহের তালিকায়।

    শুনানিতে অগ্রাধিকার ও প্রয়োজনীয় নথি

    শুনানি প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে সম্পন্ন হবে। তবে প্রথম দিকে সেই সব ভোটারদের ডাকা হবে যাদের তথ্যে বড় ধরণের অসামঞ্জস্য রয়েছে।

    যাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে:

    ১. যারা ২০০২ সালের ভোটার তালিকার তথ্যের সাথে বর্তমান তথ্যের কোনো যোগসূত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

    ২. যারা নির্দেশ সত্ত্বেও কোনো বৈধ নথিপত্র বা সাপোর্টিং ডকুমেন্ট জমা দেননি।

    ৩. যাদের এনুমারেশন ফর্ম যথাযথভাবে পূরণ করা হয়নি।

    প্রামাণ্য নথি: হিয়ারিংয়ে পরিচয় ও নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে মোট ১৩টি নথি গ্রহণ করা হবে। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এবার CAA সার্টিফিকেটকেও প্রামাণ্য নথি হিসেবে গ্রহণ করার কথা জানানো হয়েছে।

    ভুয়ো তথ্যে জেল ও জরিমানা

    নির্বাচন কমিশন এবার অত্যন্ত কঠোর অবস্থান নিয়েছে। শুনানিতে যদি কোনো ব্যক্তি জাল বা ভুয়া নথি জমা দেন এবং তা ধরা পড়ে, তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১ বছরের জেল এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে।

    সাধারণ ভোটারদের জন্য স্বস্তি

    সন্দেহজনক তালিকায় নাম থাকলেও সাধারণ মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই বলে জানিয়েছে কমিশন।

    বিএলও স্তরে সমাধান: যদি কোনো ভোটারের নাম বা পদবীর ছোটখাটো ভুল বিএলও (BLO) স্তরেই সঠিক নথি দিয়ে সংশোধন করা হয়ে থাকে এবং বিএলও সিস্টেমে ‘সন্তোষজনক মন্তব্য’ (Satisfactory remarks) প্রদান করেন, তবে তাঁদের সশরীরে শুনানিতে নাও আসতে হতে পারে।

    যাচাইকরণ: মঙ্গলবার পর্যন্ত ইআর‌ও-দের (ERO) হাতে সময় রয়েছে আপলোড করা নথিগুলো খতিয়ে দেখার। সঠিক তথ্য থাকলেই ভোটার তালিকায় নাম বহাল থাকবে।

    পরবর্তী ধাপ

    আগামী ১৬ই জানুয়ারি SIR ড্রাফট লিস্ট বা খসড়া তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে। আগামীকাল থেকে শুরু হওয়া এই শুনানি পর্বই নির্ধারণ করবে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের ভোটার তালিকার ভাগ্য।

    নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট বার্তা: প্রকৃত নাগরিকের ভয়ের কিছু নেই, তবে অনুপ্রবেশকারী বা জালিয়াতির মাধ্যমে ভোটার তালিকায় নাম তোলা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)