সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো: মমতার ঠিক করে দেওয়া মডেলই মানছে মোদি সরকার
বর্তমান | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: সংসদে বঙ্কিমচন্দ্রকে ‘বঙ্কিমদা’ সম্বোধন করে কার্যত লেজেগোবরে নরেন্দ্র মোদি। যদিও প্রধানমন্ত্রীতেই শেষ নয়। খোদ কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত লোকসভায় বলেছেন ‘বঙ্কিম দাস চ্যাটার্জি’। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্বোধন করেছেন, নেতাজি সুভাষ প্যালেস (যে নামে দিল্লিতে রয়েছে মেট্রো রেলস্টেশন)। তাই একপ্রকার ‘প্রায়শ্চিত্ত’ করতেই এবার সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় প্রস্তাবিত বাংলার মডেলে আপত্তি দেখাচ্ছে না মোদি সরকার।
এখনও পর্যন্ত প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ট্যাবলো বিশেষজ্ঞ কমিটির পাঁচটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে মডেল পেশ করেছে, আপত্তি করেনি কেন্দ্র। বরং মডেল যাতে আরও সুন্দর হয়, সেব্যাপারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ফলে শেষ মুহূর্তে আমচকা কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি না হলে এবার দিল্লির কর্তব্যপথে বাংলার ট্যাবলো নজর কাড়বে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের মত।
সাধারণতন্ত্র দিবসে এবার দিল্লির ট্যাবলো প্যারেডের থিম, ‘স্বতন্ত্র কা মন্ত্র: বন্দেমাতরম।’ তারই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ তুলে ধরবে ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা।’ অত্যন্ত বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিবঙ্গের ট্যাবলোর একেবারে সামনে থাকবে বিশ্ববাংলার লোগো ‘ব’। সাধারণত কোনও রাজ্যের লোগো লাগাতে দেওয়া হয় না। তবে এক্ষেত্রে আপত্তি করেনি কেন্দ্র। সেই মতো মডেল তৈরিতে এগচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ।
বাংলার ট্যাবলো মডেলে সবার সামনে থাকবে, আনন্দমঠ উপন্যাসে বন্দেমাতরম লিখছেন বঙ্কিমচন্দ্র। খগের কলম দিয়ে। পিছনে পাঁচ মণীষী তথা স্বাধীনতা সংগ্রামীর মডেল। ঘোড়ায় চড়া আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক সুভাষচন্দ্র, জোব্বা পরিহিত রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় পতাকা হাতে মাতঙ্গিনী হাজরা এবং ফাঁসির মঞ্চে ক্ষুদিরাম। মডেলের সবারই মাপ এক। কাউকেই ছোটবড়ো করা যাবে না বলেই মত মুখ্যমন্ত্রীর। তা মেনে নিয়েছে কেন্দ্র।
ট্যাবলো গাড়ির পাশের অংশে থাকবে চিত্তরঞ্জন দাশ, স্বামী বিবেকানন্দ, কাজি নজরুল, অরবিন্দ ঘোষ, বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো ১২ জনের মোটিফ। এবং আলিপুর জেল। যদিও এখন আলিপুর সংগ্রহালয় হয়ে গিয়েছে। আর সেই সংগ্রহালয় লেখাই থাকবে মডেলের গায়ে। তাতেও আপত্তি নেই কেন্দ্রের। বঙ্কিমচন্দ্রর খগের কলম, দোয়াত যাতে একেবারে আসলের মতো দেখতে হয়, রাজ্যকে সেই পরামর্শ দিয়েছে কমিটি। রাজ্য জানিয়েছে, নৈহাটিতে বঙ্কিমচন্দ্রর স্মৃতিবিজড়িত যে সংগ্রহালয় রয়েছে, সেখানকার দোয়াত কলমেরই রেপ্লিকা হবে। ট্যাবলোয় লাইভ অভিনয় হবে, ইংরেজ অত্যাচার করছে। আর প্রতিবাদে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জাতীয় পতাকা হাতে প্রতিরোধ করছেন। নেপথ্যে বাজবে গান, বন্দেমাতরম। তবে জাতীয় গীতের সুরে নয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ১৮৯৫ সালে সুর দিয়েছিলেন বন্দেমাতরমে। পরের বছর কলকাতায় এআইসিসি অধিবেশনে নিজে গেয়েছিলেন। সেই সুরেই বাজবে জাতীয় গীত। এক্ষেত্রেও আপত্তি করেনি কেন্দ্র। পশ্চিমবঙ্গ সহ ১৭ টি রাজ্যের ট্যাবলো চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। রয়েছে, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, অসম সহ বিজেপি শাসিত নটি রাজ্য। বাকি তামিলনাড়ু, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, কেরলের মতো সাত রাজ্যের ট্যাবলো। যে যে রাজ্যে ছাব্বিশে ভোট, তাদের বাদ দেওয়া হয়নি।