শুনানির আগে আড়াইশোর বেশি মাইক্রো অবজার্ভারকেই শোকজ! অব্যাহতি চেয়ে সিইও দপ্তরে দরবার বহু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীর
বর্তমান | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজ্যে এসআইআরের শুনানি শুরু হওয়ার আগেই এবার ২৫০ জনের বেশি মাইক্রো অবজার্ভারকে শোকজ করল নির্বাচন কমিশন। ২৪ ডিসেম্বর মাইক্রো অবজার্ভারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে কমিশন। সেখানে উপস্থিত না-থাকার জন্যই এই বিপুল সংখ্যক মাইক্রো অবজার্ভারকে শোকজের নোটিশ ধরানো হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের জবাব তলব করা হয়েছে।
এদিকে, মাইক্রো অবজার্ভারের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে শুক্রবার রাজ্যের সিইও দপ্তরের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বহু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। কেউ অসুস্থতার কারণ দেখিয়েছেন, কেউ আবার জানিয়েছেন, ওইসময় তাঁর বিয়ে স্থির হয়েছে। তাহলে ডিউটি করবেন কীভাবে? ফলে শুনানি শুরুর আগেই রীতিমতো চাপে কমিশন। শুনানি পর্বে নজরদারির জন্য প্রায় ৪৬০০ জন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীকে মাইক্রো অবজার্ভার হিসাবে নিয়োগ করেছে কমিশন। কিন্তু অভিযোগ, যাঁদের এই কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হয়নি। শোনা হয়নি তাঁদের কারও বক্তব্য। কেউ বাড়ি থেকে অনেক দূরের শুনানি কেন্দ্রে ডিউটির নোটিস পেয়েছেন। কেউ আবার শারীরিকভাবে সক্ষমই নন।
ঝাড়গ্রাম থেকে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে কমিশনের দপ্তরে এসেছিলেন স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় কর্মরত সুব্রতকুমার পাল। তাঁর বক্তব্য, বহুবছর আগে তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। তখন থেকেই তাঁর দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। কথাও বলতে পারেন না তিনি। কিন্তু সুদূর উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে এসআইআরের শুনানির ডিউটিতে তাঁকে পাঠানো হচ্ছে। এই কাজ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী অমর্ত্য বসু জানিয়েছেন, ২৫ জানুয়ারি তাঁর বিয়ে। তারপর মধুচন্দ্রিমার পরিকল্পনাও রয়েছে। তাই তাঁকে এই ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সিইও অফিসে এমনই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাইক্রো অবজার্ভার জানান, তাঁর বাড়ি কলকাতায়, কর্মক্ষেত্র রুবির কাছে। কিন্তু এসআইআরের ডিউটি পড়েছে সুদূর জলপাইগুড়িতে! সেখানে পৌঁছোনো এবং মাসখানেক ধরে ডিউটি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। রিষড়ার বাসিন্দা এক ব্যক্তি প্রশিক্ষণ চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে মাইক্রো অবজার্ভার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের বাবাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি নিয়ে এদিন সিইও দপ্তরে আসেন ওই আধিকারিকের দুই মেয়ে।
এছাড়াও নানারকম সমস্যা নিয়ে সিইও দপ্তরে হাজির হয়েছেন অনেকে। তাঁদের সমস্যার কথা লিখিতভাবে জানিয়ে অব্যাহতি চেয়েছেন তাঁরাও। কমিশন আপাতত সকলের আবেদন গ্রহণ করেছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হবে। তারপর আবেদনকারীদের সমস্যাগুলি নিয়ে কমিশন কী ভাবছে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে তাঁদের। তবে যাঁদের সমস্যা গুরুতর, তাঁদের অব্যাহতি দিয়ে দেওয়া হবে বলেও কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে।