• জুয়েলের সহকর্মীর মুখে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • মাজার বলেন, ‘কিছু লোক আমাদের কাছে এল। বিড়ি চাইল প্রথমে। তারপরই আধার কার্ড দেখতে চাইল। নিমেষে জুয়েলের দিকে এগিয়ে এল। ভারী বস্তু দিয়ে চোখের সামনে মাথা থেঁতলে খুন করল ওরা।’ জুয়েলের আরেক সহকর্মী নিজামুদ্দিন খানের অভিযোগ, বাংলাদেশি ভেবে হেনস্তা করা হয় তাঁদের। নির্মম অত্যাচার করা হয়। তাতেই মৃত্যু হয় জুয়েলের। মাজার এবং নিজামুদ্দিন দু’জনেই বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি। প্রত্যেকের শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন। শারীরিক যন্ত্রণা ছাড়াও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাঁরা।

    মুর্শিদাবাদের সুতি ১ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা জুয়েল রানা জীবিকার প্রয়োজনে ওড়িশার সম্বলপুরে থাকতেন। কাজের খোঁজে ২০ ডিসেম্বর তিনি কয়েকজন যুবকের সঙ্গে ওড়িশায় যান। বুধবার রাতে প্রায় সাড়ে ৮টা নাগাদ জুয়েল একটি স্থানীয় চায়ের দোকানে যান, যেখানে আগে থেকেই তাঁর দুই বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। তিনজন নিজেদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বাংলায় কথা বলছিলেন। অভিযোগ, ঠিক সেই সময় পাঁচ জন দুষ্কৃতী সেখানে হাজির হয়। ভাষার কারণে তাঁদের বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হয় এবং সেই অভিযোগ থেকেই শুরু হয় হেনস্তা ও মারধর। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, নির্মম অত্যাচারের জেরেই ঘটনাস্থলেই জুয়েলের মৃত্যু হয়। পরে তাঁকে সম্বলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।

    ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর কফিনবন্দি দেহ গ্রামে পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবার ও পরিজনেরা। গোটা এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে একে বাংলাবিরোধী মানসিকতার ফল বলে কড়া ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে। ঘাসফুল শিবিরের দাবি, বাঙালি হওয়ার কারণেই একজন ভারতীয় নাগরিককে প্রাণ দিতে হয়েছে। যদিও ওড়িশা পুলিশ এই অভিযোগ মানতে নারাজ। পুলিশের বক্তব্য, ভাষা বা বাংলাদেশি সন্দেহ নয়, বিড়ি নিয়ে বচসার জেরেই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও এই বিড়ি-তত্ত্ব মানতে নারাজ অনেকেই।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)