• ডিজিটাল গ্রেপ্তারির ভয়ে ৬ লক্ষ খোয়ালেন তমলুকের অধ্যাপিকা
    এই সময় | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, তমলুক: সিবিআইয়ের নাম করে 'ডিজিটাল গ্রেপ্তারি'র ভয় দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রাক্তন অধ্যাপিকার কাছ থেকে ছ'লক্ষ টাকা প্রতারণা করা হলো। অভিযোগ, দু'দিন ধরে সত্তরোর্ধ্ব ওই বৃদ্ধাকে ঘরবন্দি রেখে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে সিবিআই মামলায় যুক্ত থাকার ভয় দেখিয়ে ছ'লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা। পরে প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে তমলুক থানায় অভিযোগ করেন অধ্যাপিকা।

    পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে একটি মিউজ়িক কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপিকা ৭৬ বছরের জয়শ্রী রায় বর্তমানে তমলুকের একটি আবাসনে একাই থাকেন। তাঁর মেয়ে দেবশ্রী রায় চক্রবর্তী মহিষাদল গার্লস কলেজের অধ্যাপিকা। জয়শ্রীর অভিযোগ, ২২ ডিসেম্বর সকালে তাঁর ফোনে মুম্বইয়ের একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। সিবিআই আধিকারিক পরিচয় দিয়ে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বলা হয়-৮০ কোটি টাকার বিশাল আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়িয়েছে। এমন কী, এই মামলায় দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেশ গোয়েলের নামও জড়িত। বলা হয়, এর জন্য দিল্লিতে গিয়ে হাজিরা দেওয়ার দরকার নেই। 'ডিজিটাল' মাধ্যমে তাঁকে জেরা করা হবে। জয়শ্রীর কথায়, 'ওদের কাছে এ সব শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। মাথা কাজ করছিল না।' তিনি জানান, এর পর তাঁকে ফোনে ভিডিয়ো অন করে সামনে বসে থাকতে বলা হয়। বাড়ির বাইরে যাওয়া বা অন্য কারও সঙ্গে কথা বলতেও নিষেধ করা হয়। তিনি বলেন, 'ওদের আমি জানাই, আমার গানের ক্লাস রয়েছে। আমার গানের ক্লাসেও ভিডিয়ো কল অন রেখে ওরা নজরদারি চালায়। পরে জানতে চায় ব্যাঙ্কে কত টাকা আছে। কিছু ফিক্সড ডিপোজ়িট আছে জানালে তারা বলে, ওই টাকা তুলে দিতে হবে। আমি ইতস্তত করায় ভয় দেখায়, যে কোনও সময় আমাকে খুন করা হতে পারে। এমন কী সিবিআই-এর লোগো দেওয়া ভুয়ো কাগজও পাঠায়।'

    প্রায় দু'দিন ধরে কার্যত গৃহবন্দি জয়শ্রীর কাছ থেকে ধাপে ধাপে টাকা দাবি করা শুরু হয়। জয়শ্রী বলেন, 'ওরা বলেছিল, না মানলে আমাকে 'থার্ড ডিগ্রি' দেওয়া হবে। তাই ভয়েই ৬ লক্ষ টাকা পাঠাই। ২৪ ডিসেম্বর টাকা পাঠানোর পরে ওদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরদিন মেয়েকে সব জানাই এবং অনলাইন সাইবার ক্রাইম পোর্টালে অভিযোগ করি। ২৬ ডিসেম্বর তমলুক থানায় লিখিত অভিযোগ করি।' তমলুক থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

    মেয়ে দেবশ্রী বলেন, 'আমরা এখন এতটাই সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি যে, ব্যক্তিগত তথ্য সহজেই প্রতারকদের হাতে চলে যাচ্ছে। আমার মা-ও ভয় আর বিভ্রান্তির কারণে ওদের কথায় বিশ্বাস করে ছয় লক্ষ টাকা হারিয়েছেন। আমি চাই পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিক।'

  • Link to this news (এই সময়)