আজকাল ওয়েবডেস্ক: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে নামাঙ্কিত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর বিধানসভার বিজেপি পার্টি অফিসে রমরমিয়ে চলছে মদের আসর।
এমন বিস্ফোরক অভিযোগ সামনে আসতেই তোলপাড় রাজনৈতিক মহল। দলের জেলা সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসু ও তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন বিজেপির আদি নেতা ও কর্মীরা।
পার্টি অফিসের দরজা ভেঙে মদের বোতলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতেই শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। ঘটনায় নিন্দায় সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও।
বেশ কয়েক মাস ধরেই জামালপুর বিধানসভায় বিজেপির ‘আদি’ ও ‘নব্য’ এই দুই শিবিরে বিভক্ত দল। বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসুর অনুগামীদের সঙ্গে পুরনো বিজেপি নেতা-কর্মীদের বিবাদ এখন প্রকাশ্য সংঘাতের রূপ নিয়েছে।
বিজেপি শিবিরের অভিযোগ, ইদানীং সন্ধ্যা নামলেই জামালপুরের বিজেপি পার্টি অফিস, অর্থাৎ ‘ডা. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভবনে’, মদের আসর বসাচ্ছেন জেলা সভানেত্রীর ঘনিষ্ঠরা।
এই খবর পাওয়ার পর থেকেই আদি বিজেপির নেতা-কর্মীরা পার্টি অফিসের ওপর নজরদারি শুরু করেন। জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় স্মৃতিকণা বসুর অনুগামীরা পার্টি অফিসে পৌঁছনোর খবর পেতেই আদি শিবিরের নেতারা সেখানে জড়ো হন। তারা আচমকাই পার্টি অফিসের ভিতর ঢুকে পড়েন।
অভিযোগ, সেই সময় পার্টি অফিসের ভিতরে বিজেপির কাটোয়া সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক সৌমেন হাজরা, জামালপুরের ৩ নম্বর মণ্ডল সভাপতি অসীম শীল, ১ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ বাগ, ৩ নম্বর মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক সমীরণ দাস-সহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
তাঁদের হাতেনাতে ধরার দাবি তুলেছে পদ্ম শিবিরের অন্য গোষ্ঠী। এরপর পার্টি অফিস থেকে মদের বোতল, মদ খাওয়ার গ্লাস এবং বিভিন্ন খাবার উদ্ধার হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন আদি বিজেপির নেতা-কর্মীরা।
গোটা ঘটনার ছবি ও ভিডিও মোবাইলে তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, পরে স্মৃতিকণা বসুর অনুগামী ওই নেতাদের পার্টি অফিস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
বর্তমানে জামালপুরের বিজেপি পার্টি অফিস আদি বিজেপি কর্মীদের দখলে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কার্যালয়ের ভিতর মদের বোতল ও গ্লাসের ছবি ইতিমধ্যেই বহু মানুষের মোবাইলে ঘুরছে, এমনকি আদি বিজেপির কয়েকজন নেতা নিজেদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও সেই ভিডিও পোস্ট করেছেন।
শুক্রবারও এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত ছিল পার্টি অফিস চত্বর। এই বিষয়ে জেলা বিজেপি সভানেত্রী স্মৃতিকণা বসুর প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখনও কোনও অভিযোগ পাইনি। কী হয়েছে, কী ঘটেছে, সবিস্তারে না জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’
জামালপুর ১ নম্বর মণ্ডলের বিজেপির সহ-সভাপতি সুশান্ত মণ্ডল সরাসরি জেলা সভানেত্রীকেই দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির বিএলএ-২ তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বাংলা সফরের আগে পাঠানো পাঁচ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সুশান্ত মণ্ডলের অভিযোগ, ‘স্মৃতিকণা বসুর মদতেই এসব হয়েছে।
তাঁর অনুগামী দুর্নীতিগ্রস্ত নেতারা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে নামাঙ্কিত পার্টি অফিসে মদের আসর বসিয়ে দলের বদনাম করছে।’ এই ঘটনায় বিজেপিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসক দলও।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘এটাই তো বিজেপি। সব রকম অপকর্মে ওদের পাওয়া যাবে। ওদের মুখে রামনাম শোভা পায় না, সেটা রাজ্যবাসী অনেকদিন আগেই বুঝে গিয়েছে। আগামী বিধানসভা ভোটের পর বিজেপি বাংলা থেকে ভ্যানিশ হয়ে যাবে।’