বিপর্যয় মোকাবিলায় থানায় ৫৫ কোটির সরঞ্জাম, ব্যবহারের লোক কোথায়
আনন্দবাজার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
আগুনে জ্বলছে সর্বস্ব। কিন্তু বহুতলে আটকে পড়া লোকজনকে বার করে আনাই যাচ্ছে না, তাঁদের কাছে পৌঁছতে না পারায়। পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারছে না প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায়। একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে বহুতল ভেঙে পড়ার ঘটনাতেও। কাউকে উদ্ধার করা তো দূর, চাঙড়ের নীচে ঠিক কোথায় প্রাণ রয়েছে, তা বুঝেই ওঠা যাচ্ছে না দীর্ঘক্ষণ। শেষে জীবীত কেউ আর আটকে নেই ধরে নিয়ে কার্যত নিরুপায় হয়ে বুলডোজ়ার চালানোর নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে একাধিক বড় ঘটনায় এমন পরিস্থিতি সামনে এসেছে। নানা মহল থেকেই কলকাতায় বিপর্যয় মোকাবিলার আধুনিক পরিকাঠামো না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এ বার পুলিশের জন্য প্রায় ৫৫ কোটি টাকার বিপর্যয় মোকাবিলার সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কেন্দ্রের একটি প্রকল্পের টাকায় ওই সরঞ্জাম দিয়েই ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলার পরিকাঠামো।
তবে, আগের মতো কেন্দ্রীয় ভাবে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কার্যালয়ে এই সরঞ্জাম রাখা থাকবে না বলেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতিটি থানার জন্য আলাদা করে সরঞ্জাম বরাদ্দ হবে। থানায় থানায় রাখা থাকবে সেগুলি। যদিও বাহিনীর একাংশের প্রশ্ন, থানায় সরঞ্জাম রাখলেও সেগুলি কাজে লাগাবেন কারা? বাহিনীতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা অত্যন্ত কম জানিয়ে তাঁদের প্রশ্ন, এই সরঞ্জামের ব্যবহার শেখানো হবে কাদের? এর জন্য কি আলাদা করে নোডাল অফিসার তৈরি করা হবে?
পূর্ব কলকাতার একটি থানার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘টাকা ফেরত যাতে না যায়, তাই সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে। ভাল কথা। কিন্তু সরঞ্জাম নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দেখলে তো হবে না! বাহিনীতে লোক নিয়োগ হবে কবে?’’ লালবাজারের কর্তারা যদিও জানাচ্ছেন, আলাদা করে এ জন্য কিছু অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে তাঁরা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। এখানেই প্রমাদ গুনছেন পুলিশের একাংশ। যার প্রতিফলন ধরা পড়ল উত্তর কলকাতার একটি থানার অফিসারের মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘‘প্রয়োজনের সময়ে তো ডিউটি করারই লোক পাওয়া যায় না! বিপর্যয় মোকাবিলার সরঞ্জাম চালাবেন কারা? এ জন্য প্রশিক্ষণ নিতে লোক পাঠাতে হলেই তো থানায় থানায় লোক নিয়ে টানাটানি হবে।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, মাসকয়েক আগেই কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীতে আধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত হয়। বিপর্যয়ের সময়ে কোন কোন দিক থেকে কাজ করতে হয়, ভেবে একাধিক বিষয়ের তালিকা তৈরি হয়। সেই মতো কেনা হবে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সরঞ্জাম।
পুলিশের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘গত কয়েক বছরে বড় ঘটনাগুলির মধ্যে মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয় বা গার্ডেনরিচে ভাঙা বাড়িতে আটকে পড়ার মতো একাধিক দুর্ঘটনায় কাজে লাগানো হয়েছিল বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে। প্রতি ডিভিশনের আলাদা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি কাজ করেছিল কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীও। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে আরও উন্নত পদ্ধতিতে কাজ করা যাবে।’’
কোন বিপর্যয়ে কত বরাদ্দ
বহুতল বা উঁচু কাঠামো ভেঙে পড়লে কাজ করতে ৩০ ধরনের সরঞ্জাম। মূল্য ১১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা
অগ্নিকাণ্ডের স্থলে কাজ করতে ১১ ধরনের সরঞ্জাম। মূল্য ৮ কোটি ৮৮ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা
জলে নেমে বা জলমগ্ন পরিস্থিতিতে কাজের জন্য ১৪ ধরনের সরঞ্জাম। মূল্য ৯ কোটি ২৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা
গাছ কাটা বা পাতা ছাঁটার জন্য ৮ ধরনের সরঞ্জাম। মূল্য ৫ কোটি ১৭ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা
ধোঁয়া, গ্যাস বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মধ্যে কাজের জন্য ১০ ধরনের সরঞ্জাম। মূল্য ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা
আপৎকালীন উদ্ধারের জন্য ৭ ধরনের যানবাহন। মূল্য ১১ কোটি ১৮ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা