• ‘বিড়ি চেয়ে ধর্ম–পরিচয় জেনে বাংলাদেশি অপবাদ দিয়ে মার’, বাড়ি ফিরে আর যা জানালেন জুয়েলের সঙ্গী
    এই সময় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, বহরমপুর: রান্নাঘরে ঢুকে বিড়ি চেয়ে ধর্ম–পরিচয় জানতে চায় হামলাকারীরা। সেটা জানার পরে তারা আধার কার্ড দেখতে চায় এবং তখনই ‘তোরা বাংলাদেশি’ বলে শুরু হয় মারধর। যাতে ওডিশার সম্বলপুরে কাজ করতে যাওয়া বাংলার মুর্শিদাবাদের সুতির চকবাহাদুরপুর গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক, ২২ বছরের জুয়েল রানা মারা যান এবং গুরুতর আহত হন সুতিরই মধুপুরের সানোয়ার হোসেন। শনিবার গ্রামের বাড়িতে সানোয়ারকে ফিরিয়ে এনেছেন তাঁর বাড়ির লোকজন এবং ফিরে এসে সানোয়ার গত বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর রাতে সম্বলপুরের দানাপল্লিতে তাঁদের উপর ওই হামলার সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন। জনা ছয়েক দুষ্কৃতীর ওই হামলায় সানোয়ার মাথায় ও বুকে গুরুতর চোট পেয়েছেন, তাঁর মাথার বাঁ দিকে সেলাই পড়েছে। হামলায় জখম হন আর এক পরিযায়ী শ্রমিক, মালদার আতিউর রহমানও। জুয়েল–সহ তিন জনকেই কাঠ ও বাঁশ দিয়ে এলোপাথাড়ি মারে দুষ্কৃতীরা।

    ওডিশায় আক্রান্ত, সুতি এলাকার আর এক যুবক মহম্মদ আশিক ও বেলডাঙা এলাকার পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিক এ দিন বাড়িতে ফিরেছেন।

    এ দিন সুতির মধুপুরে নিজের বাড়িতে ফিরে এসে সানোয়ার বলেন, ‘গত বুধবার সন্ধের পরে রান্না শেষ করে আমরা শুয়েছিলাম। রাত তখন ৮টা। জুয়েল বলল, ওর খিদে পেয়েছে, ও ভাত খেয়ে নেবে। ওকে আমি বললাম, তুই যা। আমি আসছি।’ সানোয়ারের বর্ণনা অনুযায়ী, রান্নাঘর ছিল টিন দিয়ে ঘেরা। দানাপল্লি এলাকায় যে বাড়ি নির্মাণে বাংলার ৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক কাজ করছিলেন, সেই নির্মাণস্থলের কাছেই থাকতেন জুয়েলরা। সানোয়ারের কথায়, ‘আমার যেতে দেরি হওয়ায় রান্নাঘরের উনুনের পাশে বসে আগুন পোহাচ্ছিল জুয়েল। রান্নাঘরে আমি যাওয়ার আগেই ছ’জন চড়াও হয়। হিন্দি আর ওড়িয়া মিশিয়ে ওরা কথা বলছিল। ওদের এক জন জুয়েলের কাছে বিড়ি চায়। জুয়েল বিড়িও দিয়েছিল। ততক্ষণে আমি রান্নাঘরে ঢুকেছি। বিড়ি নেওয়ার পরে ওরা আমাদের ধর্ম–পরিচয় জিজ্ঞেস করে। সেটা জানানোর পরেই আমাদের আধার কার্ড ওরা দেখতে চায় এবং ‘তোরা বাংলাদেশি’ বলে মারধর শুরু করে।’

    বাংলা ছেড়ে সানোয়ার ওডিশায় কাজের জন্য যান সাত বছর আগে। তবে সম্বলপুরের দানপাল্লি এলাকায় তিনি বছর খানেক আগে কাজ শুরু করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘জুয়েলকে দেখেই বুঝেছিলাম, ওর দেহে প্রাণ নেই। আমাকে প্রথমে একটা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, পরে পুলিশ ভর্তি করায় একটা বেসরকারি হাসপাতালে।’

    সানোয়ারের বাবা মরফুল শেখের অভিযোগ, ‘ওডিশায় ছেলের চিকিৎসা সে ভাবে হয়নি। তবে ও যে বেঁচে ফিরেছে, সেটাই আমাদের কাছে অনেক। আমি চাই, আমার ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা প্রশাসন করুক।’ সুতির বিধায়ক, তৃণমূলের ইমানি বিশ্বাস বলেন, সানোয়ারকে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে।’ রঘুনাথগঞ্জের বিধায়ক ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মহম্মদ আখরুজ্জামান শনিবার বলেন, ‘বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে আক্রান্ত হলে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার জন্য দিল্লিতে আমাদের একটা বিশেষ অফিস খোলা হয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)