• বার কাউন্সিলের ভোট নিয়েও এ বার কোন্দল শাসকশিবিরে
    এই সময় | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: রাজ্য বার কাউন্সিলের ভোট সময় বেঁধে মার্চের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৮–র পরে এ রাজ্যে আর বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়নি। কিন্তু বার কাউন্সিলের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বহু আইনজীবী। রাজ্য বার কাউন্সিলের তরফে ভোট সংক্রান্ত যে সময়সূচি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। তার উপরে প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় বহু প্রকৃত ভোটারের নাম না থাকা, নামের বানান ভুল থাকারও বহু অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে গোটা রাজ্যের সাধারণ আইনজীবীরা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। অন্য দিকে, চাপানউতোর শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসকদলের আইনজীবী শিবিরের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।

    রাজ্যের বিভিন্ন আদালতের আইনজীবীদের সংগঠন ভোট সংক্রান্ত কোনও সরকারি তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে। আবার কোনও কোনও সংগঠন খসড়া ভোটার তালিকায় বহু নাম বাদ যাওয়া নিয়ে ক্ষুব্ধ। তালিকা সংশোধন এবং নতুন ভোটারের নাম তোলার সুযোগ দিতে সময়সীমার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে বহু জেলা বার চিঠি দিয়েছে রাজ্য বার কাউন্সিলকে। প্রসঙ্গত, অতি–সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট ক্লাবের ভোট দেখেছেন রাজ্যের আইনজীবীরা। সেখানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলে দুই প্রার্থী তালিকা সামনে আসা এবং বিজেপিপন্থীদের সিংহভাগ আসন দখলের ঘটনায় এখনও তপ্ত হাইকোর্ট পাড়ার রাজনীতি।

    ২৫ সদস্যের রাজ্য বার কাউন্সিলে গত নির্বাচনে ১৫ আসনে জিতেছিলেন তৃণমূলপন্থীরা। কাউন্সিলের সহসভপতি শ্যামল ঘটককে চেয়ারপার্সন করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে এ বারের ভোট পরিচালনায়। আগামী বছর ১৯–২০ ফেব্রুয়ারি বার কাউন্সিলের ভোটের ঘোষণা হয়েছে। আইনজীবীদের অভিযোগ, গত ২৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট–সহ গোটা রাজ্যে আদালতে যে দিন শীতের ছুটি পড়ল, বেছে বেছে সে দিনই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া সূচি অনুযায়ী, ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন ভোটারদের নাম তোলার কথা। অথচ ২ জানুয়ারি পর্যন্ত গোটা রাজ্যের সব আদালতে ছুটি! ফলে আদপেই ২০১৭–র পর থেকে যাঁরা আইনজীবী পেশায় এসেছেন, তাঁদের নাম ভোটার হিসেবে তোলা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় উত্তরোত্তর বাড়ছে।

    ইতিমধ্যে আলিপুর ফৌজদারি বারের একাংশ, বারুইপুর আদালত, রায়গঞ্জ আদালত, বালুরঘাট, তেহট্ট, জলপাইগুড়ি–সহ বহু আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশন থেকে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে বার কাউন্সিলে। জেলার বারগুলির মূল অভিযোগ, বহু প্রকৃত ভোটাররের নাম বাদ পড়েছে খসড়া ভোটার তালিকায়, যে সূচি প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বাস্তবে ভোটার তালিকা সংশোধন বা নতুন ভোটারের নাম তোলা প্রায় দুঃসাধ্য। রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় মানছেন, ‘যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে, তাতে বহু ভোটারের নাম না থাকায় এবং নতুন ভোটারের নাম তোলার সময়ে সব আদালত ছুটি থাকায় বহু অভিযোগ আসছে। আমরা কাউন্সিলের চেয়ারপার্সনকে জানিয়েছি। প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ গিয়ে যে সমস্যা হয়েছে, তা মেটানোর জন্যে জানানো হয়েছে।’

    আবার প্রকৃত ভোটারের নাম বাদ পড়া এবং নতুন ভোটারের নাম তোলার সময়সংক্ষেপ–সহ সহ নানা অনিয়মের অভিযোগের পিছনে বর্তমান বার কাউন্সিলের তৃণমূলপন্থী পদাধিকারীদের একাংশের ষড়যন্ত্র দেখছেন তৃণমূলেরই রাজ্য লিগাল সেলের আহ্বায়ক পদ থেকে অপসারিত তরুণ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, ‘বার কাউন্সিলের ভোটের জন্য যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বাস্তবের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। ফলে তাঁরা যা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাতে জেলায় জেলায় নতুন ভোটারদের নাম তোলাই যাবে না। বিজেপিকে সুবিধা করে দিতেই খুব অঙ্ক কষে এই সব করা হচ্ছে।’ যদিও ভোট তদারকির দায়িত্বে থাকা শ্যামল ঘটকের দাবি, ‘সবটাই নিয়ম মেনে হচ্ছে। বার কাউন্সিল একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। সুপ্রিম কোর্টের বেঁধে দেওয়া নির্দেশিকা মেনেই ভোট হবে। অনিয়ম কিছু হবে না।’

  • Link to this news (এই সময়)