কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করে হস্তশিল্প মেলায় নজর কাড়ছেন কোচবিহারের হরিদাস, মিরিকের পূজন
বর্তমান | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: এক টুকরো কাঠ খোদাই করে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘হাট’ কবিতার গ্রাম বাংলার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হাঁড়ি, কলসি বোঝাই করা গোরুর গাড়ি সহ হাটের দৃশ্য নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন কোচবিহারের বিমানবন্দর লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা হরিদাস সান্যাল। ২৬ বছর ধরে কাঠের উপর ভাস্কর ধর্মী কাজ করে চলেছেন তিনি। সেই অপরূপ সৃষ্টি কর্ম নিয়ে তিনি এসেছেন শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে রাজ্য হস্তশিল্প মেলায়।
স্টল ভর্তি কাঠ দিয়ে ভাস্কর্যের আদলে ত্রিমাত্রিক নানা শিল্পকর্ম। যা দেখতে স্টলে ভিড় বাড়ছে। এক টুকরো কাঠের উপর খোদাই করে নর-নারীর যৌবনের মুখ তৈরি করেছেন। আবার সেই ছবির মধ্যেই গভীরভাবে দৃষ্টি রাখলে তাদের বার্ধক্যের চেহারাও ফুটে উঠছে। তাঁর এরকম হরেক শিল্পকর্ম এবারের হস্তশিল্প মেলার অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। শুধু ভাস্কর্য ধর্মী কাজই নয়, আকর্ষণীয় নানা ধরনের নকশার চেয়ার, ডাইনিং টেবিল, দরজার পাল্লাও রয়েছে হরিদাসবাবুর স্টলে।
এবারের হস্তশিল্প মেলায় কাঠের কাজে তাঁর সঙ্গে সমানভাবেই নজর কাড়ছেন মিরিকের পূজন ঘিসিং। বৌদ্ধ শিল্প সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে তিনি কাঠের নানা ধরনের জিনিস তৈরি করেন। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন। মিরিক থানার পাশেই তাঁর কারখানা। সেখানে ১৭ জন কর্মী কাজ করছেন। বুদ্ধিস্ট আর্টের উপর ভিত্তি করেই বৌদ্ধ সংস্কৃতির নানা ধরনের সামগ্রীর পাশাপাশি তিনি কাঠ দিয়ে গুম্ফা তৈরি করেছেন। রয়েছে আকর্ষণীয় ডিজাইনের টেবিল, বাসনপত্র সহ আরও অনেক কিছু। পূজন ঘিসিং বলেন, রাজ্য সরকারের তরফে পাহাড়ের শিল্পীদের এই কাজে উৎসাহিত করতে আমি প্রশিক্ষণ দিই। নেপাল, ভুটান, সিকিম সহ উত্তর ভারতেও কাঠের এই শিল্পকর্মের ভালো চাহিদা রয়েছে।
এদিকে কোচবিহারে হরিদাসবাবুর এবারের লক্ষ্য ট্রেনিং সেন্টার খোলার। তিনি বলেন, গত বছরও এই হস্তশিল্প মেলা এসেছিলাম। আমার জিনিসের ভালো চাহিদা ছিল। শুধু নকশা করা একটি দরজার পাল্লা এক লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এবারও আমার জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখছি।
এই দুই শিল্পী এধরনের মেলা করার জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। হরিদাস সান্যাল ও পূজন সিং বলেন, এধরনের মেলা হওয়ার ফলে আমরা এক জায়গায় নানা ধরনের ক্রেতা পাই। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে পরিচয় হয়। নতুন নতুন কাজের ভাবনাও সংগ্রহ করি। এই মেলাতে ঘুরতে বিভিন্ন জায়গার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। যাদের অনেকেই পরে আমাদের জিনিস কেনেন। এই মেলা আমাদের মতো অন্য হস্তশিল্পীদেরও ভালো বাজার দিয়েছে।