• মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উদ্যোগে ব্রাহ্মণের সৎকার, সম্প্রীতির নবদ্বীপ
    বর্তমান | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: ফের সম্প্রীতির নজির গড়ল বৈষ্ণব তীর্থ নবদ্বীপ ধাম। এখান থেকেই যিনি সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়েছিলেন, সেই যুগাবতার চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভূমিতে এক ব্রাহ্মণ সন্তানের সৎকার নিষ্ঠার সঙ্গে হিন্দুধর্মের রীতি মেনে করলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রথা মেনে তাঁরা মৃত ওই ব্যক্তিকে কাঁধে তুলে নিয়ে যান শ্মশানঘাটে। 

    বর্তমান কঠিন সময়ের প্রেক্ষিতে চৈতন্যভুমের এই ছবি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন নবদ্বীপের বিশিষ্টজনরা। তাঁদের কথায়, প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে আমাদের নবদ্বীপনন্দন শ্রীচৈতন্য ঠিক এই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন। মহাপ্রভুর উত্তরসূরী হিসেবে আমরা তাঁর যে আদর্শ আজও বয়ে নিয়ে চলেছি, তা আরও একবার প্রমাণ করে দিল এই ঘটনা।

    নবদ্বীপের গৌড়ীয় বৈষ্ণব সমাজের মহাসচিব কিশোরকৃষ্ণ গোস্বামী বলেন, এর নামই ভারতবর্ষ। যতই যেখানে যা হোক না কেন, এখানে হিন্দু-মুসলমান বলে কিছু নেই। মনুষ্যত্বের জয়গান করলেন ওই মুসলিম পরিবারগুলি। মহিশুড়া বড় মসজিদের ইমাম শরিফুল ইসলাম শেখ বলেন, উনি দীর্ঘদিন আমাদের কাছেই থাকতেন। এখানে আমরা জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবাই মিলে একসঙ্গে থাকি। উনি হিন্দু হলেও মানুষ হিসেবে আমরা সবাই এক। সেজন্য ওঁর শেষকৃত্যে  অংশ নিয়েছি আমরা।

    নবদ্বীপের মহিশুড়া পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় চার বছর ধরে বাস করছিলেন বছর তিয়াত্তরের বৃদ্ধ গোপাল গোস্বামী। ব্রাহ্মণ সন্তান গোপালবাবু। তিনি ছিলেন অকৃতদার। শেষ সময়ে ঠাঁই হয় মহিশুড়ার এক শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে। পঞ্চায়েতের উপপ্রধান আকমল সরদারের বাড়ির কাছে সেই কেন্দ্র। আকমলের বাড়ির খাবারই খেতেন গোপালবাবু। দেখাশোনাও করতেন ওই মুসলিম পরিবারের সদস্যরা। 

    এ’দিন তিনি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। শুক্রবার সন্ধ্যায় মারা যান। এরপরেই শনিবার গোপাল খুড়োর সৎকারে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্থানীয় মুসলিমরা।

    আকমলের পুত্রবধূ নদীয়া জেলা পরিষদের সদস্যা আরজুবানু খাতুন। গোপাল খুড়ো আরজুবানুকে মেয়ের চোখে দেখতেন। গোপালবাবুকে কাকা বলে ডাকতেন আরজুবানু। সেই থেকে নাম হয়ে যায় গোপাল খুড়ো। তাঁর মৃত্যুতে আরজুবানু শোকাহত। শনিবার নবদ্বীপ মহাশ্মশানে হিন্দুশাস্ত্র মতে গোপালবাবুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন আরজুবানুর পরিবার এবং গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। 

     এদিন আরজুবানু শ্মশান ঘাটে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, চার  বছর ধরে আমাদের এলাকায় ছিলেন উনি। সকাল হলেই গোপালকাকু চলে আসতেন বাড়িতে।  আমাকে উমা বলে ডাকতেন। ওঁর সৎকারের যাবতীয় কাজ হিন্দু রীতি মেনেই হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)