নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত, বারাকপুর ও সংবাদদাতা, বসিরহাট, বনগাঁ: গোটা রাজ্যের সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনায়ও শনিবার থেকে শুরু হয়ে গেল এসআইআরের শুনানি। প্রথম দিন কড়া নিরাপত্তার মধ্যে নির্বিঘ্নেই মিটেছে শুনানি পর্ব। তবে সকাল থেকে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে ক্ষুব্ধ ভোটারদের একাংশ। হিঙ্গলগঞ্জে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক ভোটার। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। অনেকেই বিরক্তির সুরে বলেন, ‘আর কত বার লাইনে দাঁড়াতে হবে, কে জানে!’ বারাসতের মারুফা খাতুন বলেন, ‘আমার বাবাকে নোটিশ দিয়েছে। তাই সকাল থেকে লাইনে আছি। বাবা তো দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না এতক্ষণ।’ সাত্তার মল্লিক ও সুনীল শীল দু’জনেই বিশেষভাবে সক্ষম। তাঁরা বললেন, ‘প্রতিবার ভোট দিয়েছি। এবার চিঠি দিয়ে বলা হল, শুনানিতে হাজির হতে হবে। কী ভুল আছে, জানি না।’বারাসতের সরোজিনী পল্লির বাসিন্দা অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় কর্মসূত্রে চেন্নাইয়ে থাকেন। তড়িঘড়ি তিনি এসেছেন প্লেনের টিকিট কেটে। অনিন্দিতা বলেন, ‘শুক্রবার জানতে পারি যে আমাকে শুনানিতে হাজির হতে হবে। অনলাইনে শুনানি হলে ভালো হত। রাতেই ফিরতে হবে আমাকে। ভাবতে পারেন, কী দুর্ভোগ!’ সীতা মণ্ডল নামে হিঙ্গলগঞ্জের সাহেবখালির এক বৃদ্ধা শুনানি কেন্দ্রে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সীতাদেবীর বউমা ফাল্গুনী মণ্ডল বলেন, ‘শুনানি কেন্দ্রে আমি শাশুড়ির সঙ্গে থাকব বলেছিলাম। কিন্তু আধিকারিকরা থাকতে দেননি। আতঙ্কে উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’ প্রায় ২২ কিমি দূর থেকে বাগদা বিডিও অফিসের শুনানি কেন্দ্রে এসেছিলেন ৮১ বছরের বিমলচন্দ্র প্রধান। তিনি বললেন, ‘১৯৬৬ সালে স্কুল শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিই। ২০০২ সালের তালিকায় নামও রয়েছে। তবুও শুনানিতে আসতে হল। বয়স্কদের জন্য নাকি বাড়িতে শুনানির ব্যবস্থা করা হবে! কিন্তু বিএলও আমাকে আসতে বলেছেন। তাই এলাম।’ পেশায় হকার তপনকান্তি রায় বলেন, ‘একদিন কাজে যেতে না পারলে আমাদের খাওয়া জোটে না। সেখানে প্রায় ১৫০ টাকা খরচ করে এত দূরে শুনানিতে আসতে হল।’ বনগাঁ সিনিয়র মাদ্রাসায় শুনানিতে আসেন পাল্লার বাসিন্দা পেশায় কাঠমিস্ত্রি বাবু বিশ্বাস। তিনিও বলেন, ‘সারাদিন এখানেই কেটে গেল। কাজে যেতে পারলাম না।’ বারাকপুরেও মোটের উপর নির্বিঘ্নেই মিটেছে এদিনের শুনানি পর্ব। এখানকার ৯৬ কেন্দ্রে মোট প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জনকে এদিন শুনানির জন্য ডাকা হয়েছিল। হালিশহরের বাসিন্দা বৃদ্ধ সমর ঘোষ শুনানি কেন্দ্রে এসে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। নিজস্ব চিত্র