নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: প্রযুক্তির শিকার বহু ভোটার! শিকার হয়রানিরও! আর শুনানি শুরুর পর শেষ পর্যন্ত হুঁশ ফিরল কমিশনের। জানা যাচ্ছে, ২০০২ সালের ভোটার তালিকা সঠিকভাবে তুলে দেওয়াই হয়নি বিএলও অ্যাপে। তার জেরে শেষ তালিকায় নিজের বা আত্মীয়ের নাম থাকা সত্ত্বেও ভোটার চিহ্নিত হয়েছেন ‘আনম্যাপড’ হিসেবে। অর্থাৎ ২০০২ সালের তালিকায় নিজের বা আত্মীয়ের নাম না থাকা ভোটারের দলে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদেরকেও শুনানির তালিকায় রাখা হয়েছিল। অবশেষে এত পরে ঘুম ভাঙল কমিশনের। শনিবার রাজ্যের সব জেলাশাসককে পাঠানো এক নির্দেশিকায় কমিশন জানিয়েছে, আপাতত এইসব চিহ্নিত ভোটারদের শুনানির নোটিশ দেওয়া যাবে না। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর এই ধরনের ভোটারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ লক্ষ। স্বাভাবিকভাবেই এখন এই সংখ্যা অনেকটাই কমবে বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্দেশিকায় কমিশন উল্লেখ করেছে, এসআইআর পর্বে এতটা সময় কেটে যাওয়ার পর তারা নাকি লক্ষ্য করেছে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সম্পূর্ণ তথ্য বিএলও অ্যাপে তোলা হয়নি। তাই ভোটার যথাযথভাবে ২০০২ সালের তালিকার তথ্য দিয়ে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করলেও বিএলও অ্যাপ তাঁদের খুঁজে পায়নি। ফলে তাদের আনম্যাপড ভোটারের তালিকায় ফেলে দেওয়া হয়েছে। এবং সেই অনুযায়ী শুনানির নোটিশও ইস্যু হয়ে গিয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে এখন কমিশন বলছে, এই ভোটারদের নামে ইস্যু হওয়া নোটিশ স্থগিত রাখতে হবে। ভুল সংশোধনের জন্য নতুন করে এই সব ভোটারদের তথ্য অ্যাপে আপলোড করতে হবে। প্রয়োজনে বিএলওরা ফের এই ধরনের ভোটারদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের ছবি তুলে আপলোড করবেন। কমিশনের থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত চিহ্নিত আনম্যাপড ভোটারদের মধ্যে ৩৪.১১ শতাংশ অর্থাৎ ১০ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৬০টি শুনানির নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তাহলে দীর্ঘ সময় ধরে ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে ২০২৫ সালের তালিকার মিলকরণের যে কাজ হয়েছিল, তা সম্পূর্ণ না করেই এসআইআর ঘোষণা করা হল কেন? এ কি ভোটার হেনস্তা নয়?
এদিকে, শনিবার রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে শুনানি পর্ব। একে কেন্দ্র করে একাধিক জায়গায় টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। বয়স্ক ভোটারদের হয়রানির অভিযোগ এসেছে বিভিন্ন জেলা থেকে। কোনও প্রবীণ হাঁটুর ব্যথায় নুইয়ে পড়েও প্রমাণ করতে এসেছেন, তিনি দেশের বৈধ নাগরিক। আসানসোল উত্তর বিধানসভা এলাকার মণিমালা গার্লস হাইস্কুলের সামনে নিয়ম ভেঙে বিজেপির হেল্প ডেস্ক করাকে কেন্দ্র করে এদিন ছড়িয়েছে উত্তেজনা। নদীয়ায় প্রথম দিনেই সার্ভার সমস্যায় ভোগান্তিতে পড়েন বহু ভোটার। পুরুলিয়া ও আরামবাগেও শুনানিতে এসে ভোটাররা হয়রানির মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়াতেও একই অবস্থা। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী বিমলাচরণ পাঠক বলেন, ‘জীবনের বেশিরভাগ সময় সীমান্ত পাহারা দিয়েছি। ৮৬ বছর বয়সে এসে জনশুনানির লাইনে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে আমি ভারতীয় নাগরিক!’