এই সময়: বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের উপরে একের পর হামলার ঘটনার পরেও কেন নীরব ভারতের প্রধানমন্ত্রী— তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কটাক্ষ— গেরুয়া শিবির প্রচার করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নাকি ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’। উত্তপ্ত বাংলাদেশে হিন্দু হত্যা নিয়ে কেন প্রধানমন্ত্রী নীরব? কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ করছে না এবং নমোর দল বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ–সহ নির্বাচনমুখী রাজ্যে পড়শি দেশের ঘটনা নিয়ে ভোটে ফায়দা তুলতে চাইছে বলেও মনে করছেন তিনি।
তৃণমূল ভবনে শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক নাম না–করে মোদীকে খোঁচা দিয়ে বলেন, ‘যে হিন্দুদের ধারক–বাহক, রক্ষাকর্তা হিসেবে আপনি দাবি করেন...হিন্দু হৃদয় সম্রাট! আপনি কত বড় হিন্দু হৃদয় সম্রাট, তা পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ যখন হিন্দুরা মারা যাচ্ছেন, তখনই দেখা উচিত। স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের ৮০ শতাংশ হিন্দু। আপনি কোথাও এ নিয়ে একটা কথা বলেছেন?’ তাঁর সংযোজন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রী, আপনার অনেক কাজ। আপনার পার্টির কেউ গিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন? আপনি নাকি হিন্দু হিৃদয় সম্রাট! বিশ্বগুরু!’
প্রধানমন্ত্রী মোদী বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকের প্রসঙ্গে টেনে অভিষেক এ দিন বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী একটি পোস্টও করেননি। বিদেশমন্ত্রীও একটি পোস্ট করেননি। একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।...কেন এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন না? দু’মাস আগে তো প্রধানমন্ত্রী ইউনূসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মিটিং করেছেন। তারপরেও কেন এই ঘটনা ঘটবে? এই ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে? কী কারণে ঘটাচ্ছে?’
বাংলাদেশের ময়মনসিংহে দীপু দাসের নৃশংস খুনের ঘটনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গেও গেরুয়া শিবির মাঠে নেমেছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাধু–সন্তদের নিয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ সীমান্তে কিছু জায়গায় গেরুয়া শিবির প্রতিবাদ জানিয়েছে। যদিও অভিষেকের বক্তব্য, ‘এই শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের থেকে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার ভালো। বিজেপির নেতা ইউনূসকে সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন! সেই ইউনূসের সরকার হিন্দুদের পিটিয়ে মারছে। সার্টিফিকেট কে দিয়েছে? নরেন্দ্র মোদী। সার্টিফিকেট কে দিয়েছে? শুভেন্দু অধিকারী।’ যদিও বিজেপি নেতৃত্ব মনে করছেন, মোদী সরকার উপযুক্ত পদক্ষেপ করছেন। দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব কিছু প্রকাশ্যে বলা যায় না। তা ছাড়া বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল শুক্রবারই সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বিবৃতি দিয়েছেন? বিজেপি দেশজুড়ে প্রতিবাদ করছে। তৃণমূল কী করছে? হিন্দু সাধু–সন্তরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের উপরে তৃণমূল সরকারের পুলিশ লাঠিচার্জ করছে।’ যদিও অভিষেক মনে করছেন, স্রেফ নির্বাচনের দিকে তাকিয়েই গেরুয়া িশবির বাংলাদেশ নিয়ে ইস্যু করেছে। অভিষেকের কথায়, ‘এই ঘটনা নিয়ে কারা রাজনীতি করছে? এই ঘটনার ফায়দা যারা নির্বাচনে লুটতে চায়, তারা রাজনীতি করছে। তৃণমূল রাজনীতি করছে না। কংগ্রেস করছে না। ডিএমকে করছে না। আপ করছে না। জেডিইউ করছে না। আরজেডি করছে না। বিজেপি রাজনীতি করছে। তারা চায় না, বাংলাদেশ শান্ত হোক।’
তৃণমূলের অবস্থান হলো, বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র দ্বিপাক্ষিক স্তরে যে পদক্ষেপ করবে, তা সমর্থন করা হবে। যে ভাবে ‘অপারেশন সিঁদুর’–এর সময়ে তৃণমূল কেন্দ্রকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু সংগঠনের নেতা যে ভাবে হুমকি দিচ্ছেন, তার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের শাসকদলের অবস্থান নিয়ে অভিষেকের প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘অমিত শাহকে প্রশ্ন করুন, ওখান থেকে বলা হচ্ছে শিলিগুড়ি করিডর দখল করে নেব। বাংলাদেশের এই সাহস কী করে হয়?’